প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২৫, ৪:৩১:১২
শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, উপবৃত্তি গ্রহণ, ও বিদ্যালয় পরিদর্শন সব এখন এক অ্যাপেই; মাঠপর্যায়ে শুরু পাইলট প্রকল্প
বরিশাল, যশোর ও ময়মনসিংহ থেকে | মে ২০২৫
সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে চালু করেছে ‘ই-মনিটর’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, যার মাধ্যমে শিক্ষক, অভিভাবক এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, উপবৃত্তি গ্রহণ ও স্কুল কার্যক্রম রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করতে পারবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল, যশোর ও ময়মনসিংহের ৫০টি বিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ অ্যাপ ব্যবহার শুরু হয়েছে। জুন থেকে দেশের ১০টি জেলার ৫ হাজার বিদ্যালয়ে চালু হবে পূর্ণমাত্রায়।
কী আছে অ্যাপটিতে?
আইসিটি সেলের প্রকল্প পরিচালক বলেন, “এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী মনিটরিং স্বয়ংক্রিয় হবে। উপবৃত্তি পেতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা যাবে না।”
মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা: যশোরের অভয়নগর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আগে খাতায় উপস্থিতি লিখতাম। এখন অ্যাপে দিলে তা উপজেলা অফিস, জেলা অফিস সব জায়গায় দেখা যায়। এটা স্বচ্ছতা আনবে।” বরিশালের গৌরনদীর এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ের উপবৃত্তি মাসে মাসে আসছে কি না, এখন অ্যাপেই দেখতে পাচ্ছি। আগে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতাম।”
বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ
BANBEIS-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ১৪% শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ে। উপবৃত্তির অর্থ বিলম্ব, অনুপস্থিতি যাচাই না হওয়া ও মনিটরিং দুর্বলতার কারণে এই হার দীর্ঘদিন ধরেই অপরিবর্তিত।
তবে অ্যাপ ব্যবহারে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে:
সরকার কী বলছে? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, “২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই অ্যাপ ব্যবহারের লক্ষ্য রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং উপবৃত্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এটি বড় পদক্ষেপ।” মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ‘ডিজিটাল লার্নিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষানীতিবিদ ড. তাহমিনা সুলতানা বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে কেবল প্রযুক্তি নয়, এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনার দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমানভাবে যুক্ত না করলে সফলতা আসবে না।”
সুপারিশ
একটি শিশু যদি স্কুলে যায়, উপবৃত্তি পায়, এবং নিয়মিত শেখে তবে তবেই তার শিক্ষা পূর্ণ হয়। ‘ই-মনিটর’ অ্যাপ সেই প্রক্রিয়াকে শুধু ট্র্যাক করবে না, বরং একটি জাতীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে শিশু শিক্ষায় কোনো ছেদ না রাখার।