শিক্ষা ব্যবস্থায় রোবোটিক্সের পরীক্ষামূলক সংযোজন, দক্ষতার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২৫, ১১:০০:৩৭
প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষার নতুন মাইলফলক: ‘EduBot’ নামের এই হিউম্যানয়েড রোবটটি তৈরি করেছে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘TechNest Robotics’। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। রোবটটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে, স্ক্রীনে চিত্র ও ভিডিও উপস্থাপন করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারে। মূল বৈশিষ্ট্য:
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা শাওন রহমান জানান, “EduBot শুধু তথ্য সরবরাহ করে না, শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বিশ্লেষণ করে শেখার প্যাটার্ন চিহ্নিত করতেও সক্ষম।” EduBot প্রথম চালু হয় উত্তরা এলাকার একটি বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘ভিশন একাডেমি’তে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাসে এটি শিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। প্রতি ক্লাসে একজন মানুষের উপস্থিতি থাকে পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে, তবে পাঠদানে সম্পূর্ণরূপে নেতৃত্ব দিচ্ছে রোবট। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, “শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। জটিল বিষয় সহজভাবে উপস্থাপন করছে EduBot।” শিক্ষার্থীরাও এই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে উৎসাহের সঙ্গে। তারা বলছে, ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর, চলমান গ্রাফিকস ও ইন্টার্যাকশন তাদের পড়ালেখায় আরও আগ্রহ তৈরি করছে।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গে রোবোটিক্সের ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা: বিশ্বজুড়ে এডটেক (EdTech) সেক্টরে এআই ও রোবোটিক্স শিক্ষার সহায়ক হিসেবে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে স্মার্ট শিক্ষকের সহায়তায় হাজার হাজার স্কুলে পাঠদান করছে। বাংলাদেশে এখনও এই বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও TechNest Robotics এর মতো কিছু স্টার্টআপ সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ:
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে যুক্ত শিক্ষাবিদ ড. মাহবুব হাসান বলেন, “রোবট শিক্ষকের মতো প্রযুক্তি শিক্ষায় সহায়ক হতে পারে। তবে এটি কখনোই শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে না। মূল শিক্ষকের দিকনির্দেশনায় এসব প্রযুক্তিকে সম্পূরক হিসেবেই ভাবা উচিত।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সরকারি উদ্যোগ: TechNest কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে দেশের আরও অন্তত ২০টি স্কুলে EduBot পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তারা সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল শিক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ইউনিট প্রধান আমিনুল হক জানান, “আমরা এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছি। ভবিষ্যতে সরকারি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।” EduBot-এর মতো রোবটিক্স-ভিত্তিক শিক্ষা সহায়ক প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। যদিও এখনো ব্যাপক ব্যবহারের পথে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই। শিক্ষা যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি বদলাচ্ছে শেখার মাধ্যম এই রোবট শিক্ষক তারই প্রতিচ্ছবি।