সময়ানুবর্তিতার অভাব ও চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, প্রভাব পড়ছে প্রযোজনা
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ৩:৩৫:৫০
ঢালিউডের সাম্প্রতিক চিত্রে নির্মাতাদের অভিযোগের কেন্দ্রে উঠে এসেছে পেশাদারিত্বের অভাব, বিশেষ করে নায়িকাদের সময়ানুবর্তিতা নিয়ে। একাধিক বড় বাজেটের সিনেমার শুটিং নির্ধারিত সময়ে শুরু না হওয়ায় পরিচালক ও প্রযোজক মহলে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। নির্মাতারা বলছেন, সময়মতো শুটিং সেটে না আসা, চুক্তি লঙ্ঘন, ও মাঝপথে শিডিউল বাতিল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় চাপ পড়ছে বাজেট ও রিলিজ ক্যালেন্ডারে।
চুক্তি মানছে না শিল্পীরা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো ইউনিট: ঢাকা কেন্দ্রিক একটি প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "সিনেমার তারকা যদি শিডিউল না মানেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হন কেবল পরিচালক বা প্রযোজক নন, বরং পুরো ইউনিট—ডিওপি থেকে লাইটম্যান, সবাই বসে থাকেন। দিনের পর দিন শুটিং বাতিল হওয়া মানে লাখ টাকার ক্ষতি।" একই মন্তব্য করেছেন ‘ছায়া প্রতিচ্ছবি’ সিনেমার পরিচালক রফিক মাহমুদ। তাঁর কথায়, "তারকাখ্যাতি থাকলেই সবকিছু উপেক্ষা করার অধিকার আসে না। নিয়ম না মানা এখন যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।"
ফেডারেশনে একাধিক অভিযোগ জমা: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে অন্তত ৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে শিডিউল লঙ্ঘন ও অসম্পূর্ণ শুটিং ঘিরে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই নায়িকাদের বিরুদ্ধে। পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম কায়সার বলেন, "আমরা শিল্পীদের সম্মান করি। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক কাজ না মানা হলে সংশ্লিষ্টদের ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়তে বাধ্য।"
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতামত: চলচ্চিত্র সমালোচক মুনতাসীর রশীদ মনে করেন, "বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারকাদের কাছে পুরো প্রযোজনার ভার পড়ে থাকে। তারা সময়মতো না এলে অন্য সবকিছু থেমে যায়। ভারত বা ইউরোপের মত জায়গায় যেখানে শিডিউল নিয়ে আইনি চুক্তি থাকে, এখানে এখনো সেটার অভাব আছে।" তাঁর মতে, সিন্ডিকেট, স্বজনপ্রীতি ও প্রচলিত ‘স্টার পাওয়ার’ ব্যবস্থার ভেতর থেকেই এই অনিয়মগুলো জন্ম নিয়েছে।
নিয়মতান্ত্রিক শিডিউল চুক্তির দাবি উঠছে: তরুণ নির্মাতা ইমরান হোসেন বলেন, "সুনির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়া সিনেমা নির্মাণ শুরু করা উচিত নয়। শিডিউল লঙ্ঘনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা না ভেবে পেশাগত শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা দরকার।" ঢালিউডে তারকাকেন্দ্রিকতা যেমন বাজার ধরে রেখেছে, তেমনি পেশাদারিত্বের অভাব ইন্ডাস্ট্রিকে বারবার ব্যাকফুটে ঠেলে দিচ্ছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সময় এসেছে শিল্পীদের শিডিউল মানার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার।