‘প্রিয়তমা’ ও ‘শান’-এর বক্স অফিস সাফল্য ঘিরে পুরস্কারের ভাগ-বণ্টন
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ৩:৫৩:৩২
‘প্রিয়তমা’ ও ‘শান’-এর বক্স অফিস সাফল্য ঘিরে পুরস্কারের ভাগ-বণ্টন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, প্রশ্ন উঠছে সিনেমা কি শুধু নায়কের?
ঢালিউডে সিনেমা মানেই তারকা। আর তারকাদের মধ্যে শীর্ষে থাকেন যিনি নায়ক। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয় সিনেমার প্রচারণা, পোস্টার, ট্রেলার, এমনকি অনেক সময় গল্পও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একটি সিনেমা সফল হলে তার কৃতিত্ব কি কেবল একজনের? নাকি এটি পুরো ইউনিটের সম্মিলিত শ্রমের ফসল? এই প্রশ্ন নতুন নয়। তবে সম্প্রতি শাকিব খান অভিনীত ‘প্রিয়তমা’ এবং সিয়াম আহমেদের ‘শান’ সিনেমার বক্স অফিস সাফল্য ঘিরে বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। সিনেমাগুলো হিট হলেও প্রচারণায় যেন কেবল একজনই চিত্রে নায়ক। নির্মাতা, সহশিল্পী, গল্পকার, এমনকি চিত্রগ্রাহক সবাই যেন অন্তরালেই থেকে যান।
‘প্রিয়তমা’ নিয়ে বিতর্ক, কেন শুধু শাকিব খান?
২০২৩ সালের ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচিত। ছবিটি ১৫ কোটিরও বেশি ব্যবসা করে বলে জানা যায়। কিন্তু পুরো প্রচারণা কার্যক্রমে কেবল নায়ককেই সামনে রেখে সাজানো হয় পোস্টার, বিলবোর্ড ও ডিজিটাল প্রচার। নির্মাতা হিমেল আশরাফ, যিনি ‘প্রিয়তমা’ পরিচালনা করেন, একটি সাক্ষাৎকারে বলেন “এই ছবি তৈরি হয়েছে পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমে। শাকিব খান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে তাঁর পাশাপাশি অনেকেরই অবদান ছিল, যা প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি।” অভিনেত্রী আইরিন আফরোজ, যিনি ওই ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন, বলেন “দর্শক আমাকে চিনলেন না, কারণ কোথাও আমাদের দেখা যায়নি। শুধু নায়ক মুখ থাকলে সিনেমার শিল্পধর্ম হারায়।”
‘শান’ সিনেমায় একই অভিযোগ, এবার সরব সহশিল্পীরা: ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শান’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সিয়াম আহমেদ। বাণিজ্যিকভাবে ছবিটি সফল হলেও, সিনেমার পোস্টার ও প্রচারণায় সিয়ামকে ছাড়া কেউই ছিলেন না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছবির দুই সহশিল্পী, সুনেরাহ বিনতে কামাল ও আজমেরি হক বাঁধন। এক সংবাদ সম্মেলনে সুনেরাহ বলেন “সিনেমা দলগত কাজ। পুরো দলে কেউ কম নয়। একমাত্র নায়ককেই প্রাধান্য দেওয়া হলে বাকিরা কাজ করতে আগ্রহ হারাবেন।”
সমস্যা কোথায়? স্টার সেন্ট্রিক প্রচারণা না টিমওয়ার্কের অভাব?
চলচ্চিত্র বিশ্লেষক শাহেদ রহমান মনে করেন, “স্টার পাওয়ার বাংলাদেশে একধরনের ব্যবসায়িক চাল। প্রযোজকরা মনে করেন, একজন জনপ্রিয় মুখ সামনে আনলেই বক্স অফিস সাফল্য নিশ্চিত। কিন্তু এতে দীর্ঘমেয়াদে শিল্পী মনোবল, নির্মাতার মর্যাদা এবং সামগ্রিক শিল্পমান হ্রাস পায়।” তাঁর মতে, ইউরোপ বা ভারতের অনেক প্রগতিশীল সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাস্ট অ্যান্ড ক্রু তালিকা সমানভাবে গুরুত্ব পায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো প্রচারণার ফোকাস ৯০% একজনের ওপর।
বিষয়টি নিয়ে ঢালিউডে আলোচনা শুরু হয়েছে: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি সৈয়দ তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই সিনেমা হোক সবার সম্মিলিত কৃতিত্বে। শুধুমাত্র নায়ক বা নায়িকার উপর নির্ভরতা কমানো না গেলে ইন্ডাস্ট্রি এগোবে না।” তিনি জানান, ভবিষ্যতে সিনেমার প্রচারণায় পরিচালক, সহশিল্পী, টেকনিক্যাল টিমকে সামনে আনার জন্য প্রযোজকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনের সময় এসেছে: বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে নতুন নির্মাতা, নতুন গল্প, আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট। তবে সেই পরিবর্তন টেকসই করতে হলে স্টার-নির্ভর প্রচারণা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সিনেমা শুধু একক কৃতিত্ব নয়, এটি সবার সম্মিলিত সাফল্য এই উপলব্ধি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ঢালিউডের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই থেকে যাবে।