জেলার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫০:২১
সাতক্ষীরা: জেলার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল, ডুবে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। জনজীবন ও কৃষিখাত চরম সংকটে পড়েছে।
কৃষিখাতে ধ্বংসযজ্ঞ
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ডাইয়ের বিল, রামচন্দ্রপুর বিল, শাল্যের বিলসহ অন্তত ২০টি বিল এখন সম্পূর্ণ পানির নিচে। এতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধান, ১৫০ হেক্টর বীজতলা এবং ৫০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, “১০ বিঘা জমির অর্ধেক রোপণ করেছিলাম, বাকিটা এখন পানির নিচে। বীজতলাও শেষ।”
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “২০ বিঘার জমি সম্পূর্ণ ডুবে আছে। খাল বন্ধ থাকায় পানি নামছে না, আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।”
সবজি চাষিরাও রেহাই পাননি। কৃষক শফিকুর রহমান জানান, “চার বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স, বরবটি, ওল চাষ করেছিলাম সব পানির নিচে। নতুন করে শুরু করবো কীভাবে?”
জনদুর্ভোগ চরমে
শুধু কৃষি নয়, স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। ধুলিহর ইউনিয়নসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। গ্রামীণ রাস্তায় হাঁটু পানি, স্কুলে পাঠদান বন্ধের উপক্রম। সাতক্ষীরা পৌর শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ভ্যানচালক আসলাম শেখ বলেন, “রাস্তায় পানি উঠলে ভ্যান চালানো যায় না। ঘরে বসে থাকলে খাওয়াবো কীভাবে? টানা বৃষ্টিতে জীবন থেমে গেছে।”
দুর্যোগের কারণ ও সরকারি অবস্থান
স্থানীয়দের অভিযোগ, “পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাব ও খাল দখলই এমন দুর্ভোগের কারণ।”
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, “জলাবদ্ধতায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির হিসাব পেতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে।”
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৪-৫ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। জরুরি সরকারি উদ্যোগ ও ত্রাণ সহায়তা না এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।