প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৫, ১২:৩১:৩৫
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে ১২% বরাদ্দ বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ৩%। অথচ কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে স্বাস্থ্য অবকাঠামো সংস্কারের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বক্তৃতাতেই। তাহলে প্রশ্ন উঠে "শিক্ষার জয়, স্বাস্থ্যের পরাজয় কেন?" বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে সরকার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার কথা বলছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার আধুনিকায়নে বিনিয়োগ কমিয়ে দিচ্ছে। উন্নত বিশ্বে, যেমন কানাডা, সুইডেন বা জার্মানিতে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ প্রায় সমানুপাতিক। অথচ বাংলাদেশে এই ভারসাম্য এখনও অনুপস্থিত।
বিশেষজ্ঞ ডা. সানজিদা রউফ বলছেন, “শিক্ষা উন্নয়ন প্রশংসনীয়, কিন্তু স্বাস্থ্য অবহেলিত থাকলে শিক্ষার সুফল সমাজে টিকে না।” করোনা মহামারির সময় দেশের হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট কিংবা আইসিইউর অপ্রতুলতা মানুষ ভোলেনি। এখনো গ্রামগঞ্জে একজন এমবিবিএস ডাক্তার পাওয়া কঠিন। তাহলে এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে ন্যূনতম অগ্রাধিকার না দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ২.৮% বরাদ্দ, যেখানে ভারতের ৩.৫%, ভিয়েতনামের ৪.২%, এমনকি আফ্রিকার দেশ ঘানারও ৩.৯%। স্বাস্থ্যকে ‘উৎপাদনশীল খাত’ হিসেবে দেখা দরকার, যেখানে বিনিয়োগ ফল দেয় দীর্ঘমেয়াদে।
বাজেট পলিসি অনেক সময় নির্বাচনী কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। শিক্ষা খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ‘ভোট টানতে’ কার্যকর হলেও, স্বাস্থ্য খাতে প্রভাব কম দৃশ্যমান হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে 'লোক দেখানো' উন্নয়নই বেছে নিচ্ছে সরকার। একটি জাতির শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুই খাতই ভবিষ্যতের ভিত্তি। যদি স্বাস্থ্য উপেক্ষিত হয়, তবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও দুর্বল থেকে যায়। তাই পরবর্তী বাজেটে আরও ভারসাম্যপূর্ণ বরাদ্দের দিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।