আশুরা শুধু রোজা নয়, কারবালার বেদনার দিনও। হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরন্তন শিক্ষা।
প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৭:২৩
ইসলামি হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম আর তার ১০ম দিন ‘আশুরা’ শুধু একটি দিন নয়, বরং ইতিহাস, আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক। এই দিন আল্লাহ বহু নবী-রাসুলকে সম্মানিত করেছেন। সেইসঙ্গে এই দিনেই সংঘটিত হয়েছে কারবালার হৃদয়বিদারক আত্মত্যাগের ঘটনা। তাই আশুরার দিন মুসলমানদের জন্য শুধুই শোক নয়, এটি আত্মসংযম, ইবাদত ও নৈতিক পুনর্জাগরণের দিন। আশুরার দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো রোজা রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি আশাবাদী, আশুরার রোজা আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবে।” (সহিহ মুসলিম)। শুরুতে এই রোজা ফরজ ছিল, পরবর্তীতে রমজান ফরজ হওয়ার পর নফল হিসেবে রয়ে যায়। তবুও এটি নফল রোজার মধ্যে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ। মদিনায় হিজরতের পর নবীজি (সা.) দেখলেন, ইহুদিরাও আশুরায় রোজা রাখে। তখন তিনি সাহাবাদের বলেন, "তোমরা আশুরার দিন ও তার সঙ্গে আরও একটি দিন রোজা রাখো (৯ ও ১০ বা ১০ ও ১১)।" ফলে মুসলমানদের জন্য দুদিন রোজা রাখা সুন্নত।
আশুরার দিনে বিশেষ যেসব আমল করা যেতে পারে:
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারের জন্য বেশি খরচ করে, আল্লাহ তাআলা সারাবছর তার রিজিকে বরকত দেবেন।” (তিরমিজি)। তাই এদিন শুধু রোজা নয়, পরিবারকে ভালো খাওয়ানো, দরিদ্রকে দান করা এগুলোও একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী জীবনের পরিচায়ক। আশুরার আরেকটি বড় শিক্ষা হলো কারবালার আত্মত্যাগ। ৬১ হিজরির ১০ মহররম হজরত হোসাইন (রা.) সত্য ও ইনসাফ রক্ষায় নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ইসলামের আদর্শবিরোধী শাসক ইয়াজিদের সামনে তিনি বলেন, “আমি অপবিত্রের বায়আত দিতে পারি না, আমি মাথা কাটা দিতে পারি কিন্তু মাথা নত করব না।”
এই আত্মত্যাগ কেবল ইতিহাস নয়, এটি আমাদের জীবনের জন্যও শিক্ষা।
কারবালার শিক্ষা হলো
এভাবে আশুরার দিন আমাদের আত্মবিশ্লেষণ, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। একদিকে এটি যেমন রোজা, ইবাদত ও কোরআন তিলাওয়াতের দিন, অন্যদিকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চেতনা জাগিয়ে তোলে।
পরিশেষে আশুরার শিক্ষা যেন হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের পথনির্দেশ। আল্লাহ যেন আমাদের এই দিনটিকে জীবনের বাঁক পরিবর্তনের দিন বানিয়ে দেন। আমিন।