পৃথিবীর গহীনে এমন বিশাল জলাধার! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পৃথিবীর জলবৈচিত্র্যের রহস্য ভেদে নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।
প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০২৫, ১:২৪:৫৫
পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের বহু নিচে, ম্যান্টল স্তরের ‘রিংউডাইট’ নামক এক খনিজ পদার্থে আটকে আছে এই বিপুল জলাধার। এতটাই গভীরে, যেখানে পা তো দূরে থাক, আধুনিক যন্ত্রপাতিও সহজে পৌঁছায় না। তবে আধুনিক সিসমিক প্রযুক্তি ও ভূতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
কীভাবে খোঁজ মিলল এই ভূগর্ভস্থ ‘সমুদ্র’-এর?
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক দল ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে প্রথম এই ‘জলাধার’ শনাক্ত করেন। পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ শিলার ভেতর দিয়ে তরঙ্গ যেভাবে ভ্রমণ করে, তা থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন সেখানে পানি থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই মহাসাগর কোনো খালি কুঠুরি বা ফাঁকা জলাধার নয়। বরং খনিজ পদার্থের অণুর ভেতরে আটকে থাকা পানি যা বিশ্বজুড়ে পানির উৎস সম্পর্কে আমাদের চিন্তাধারাকে বদলে দিচ্ছে।
কতটা বিশাল এই জলাধার?
প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই রিংউডাইট স্তরে যত পানি আটকে আছে, তা যদি মুক্ত করা হয় তবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকা সব সমুদ্র একসঙ্গে মিলেও তা ছাড়িয়ে যাবে! এটা শুধুই একটি বৈজ্ঞানিক বিস্ময় নয়, বরং পৃথিবীর জলবায়ু চক্র ও ভবিষ্যৎ পানির সংকট নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত। ভূ-তত্ত্ববিদ ড. শেলি ম্যাকলাফলিন বলেন, “এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, পৃথিবীর জলচক্র কেবল মেঘ, বৃষ্টি আর সমুদ্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং মাটির অনেক গভীরেও চলছে এক বিশাল সঞ্চালন।”
জলবায়ু ও ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জলাধার পৃথিবীর ভেতরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। আর কোনোভাবে যদি এই পানি পৃথিবীর পৃষ্ঠে উঠে আসে, তাহলে ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির প্রকৃত উৎস নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে বিজ্ঞানীদের।
“এই আবিষ্কার শুধু ভূতত্ত্ব নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ পানিসঙ্কট সম্পর্কেও নতুন আশা দেখায়।” ড. শেলি ম্যাকলাফলিন
শেষ কথা:
মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এক বিশাল জলাধার, যার কথা এত দিন কেউ কল্পনাও করেনি! এটি যেন পৃথিবীর নিজস্ব ‘সিক্রেট ভল্ট’, যেখানে রক্ষা করা হচ্ছে ভবিষ্যতের প্রাণরসদ পানি। এই আবিষ্কার কেবল ভূবিজ্ঞানীদের নয়, গোটা মানবজাতির জন্যই এক আশাব্যঞ্জক বার্তা।