প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৩:৪৪
ভারতের রায়পুরের বাসিন্দা জগেশ্বর প্রসাদ আওয়াধিয়া (৮৩)। পেশায় ছিলেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন করপোরেশনের একজন বিলিং সহকারী। অতি সাধারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে সততার সঙ্গেই জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু সেই জীবনই কাল হলো তার জন্য।
মাত্র ১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ৩৯ বছর ধরে সমাজের লাঞ্ছনা আর আদালতের চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি এখন শুধু শান্তিতে নিজের মৃত্যু কামনা করছেন।
এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের বাসিন্দা জগেশ্বর প্রসাদ আওয়াধিয়া। ঘটনাটি ১৯৮৬ সালের, যখন জগেশ্বরের বয়স ছিল ৪৪ বছর। ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক কর্মী অশোক কুমার বর্মা তার বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য জগেশ্বরকে চাপ দিচ্ছিলেন। নিয়ম মেনে বিল পরিশোধে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন অশোক।
অশোক প্রথমে ২০ টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করলেও জগেশ্বর তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২৪ অক্টোবর অশোক ফন্দি এঁটে জোর করে জগেশ্বরের হাতে ১০০ টাকা গুঁজে দেন। ঠিক সেই সময়েই সেখানে হাজির হন নজরদারি কর্মকর্তারা। কোনো বিচার-বিবেচনা না করেই তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করা হয় জগেশ্বরকে। বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও, ঘুষখোরের তকমা লাগানো হয় জগেশ্বরের মাথায়।
এই ঘটনা জগেশ্বর ও তার পরিবারকে সমাজে একঘরে করে দেয়। মান-সম্মান সব হারানোর পাশাপাশি শুরু হয় আর্থিক অনটন। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়। পরবর্তীকালে বেতন অর্ধেক করে দেওয়া হয় এবং পদোন্নতিসহ অন্যান্য সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এছাড়া অবসর গ্রহণের পরও তার পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জীবনের শেষভাগে এসে তাকে প্রহরীর কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে।
দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে আদালতে মামলা চলার পর অবশেষে বিচারক জগেশ্বরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। ৮৩ বছর বয়সে এসে আবেগাপ্লুত জগেশ্বর বলেন, এবার অন্তত আমি শান্তিতে মরতে পারব।