কখনো ছিল অভিজাত ফলের প্রতীক, এখন সাধারণ বাজারেও হাতের নাগালে। দাম কমতেই রঙিন ফলের দিকে ঝুঁকছে মধ্যবিত্তের রান্নাঘর।
প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫০:৩৯
বাজারের ছবিটা বদলে গেছে
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতারা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন ‘ড্রাগন ৮০ টাকা, ড্রাগন ১০০ টাকা, নিয়ে যান, মজা করে খান!’ একসময় যার দাম কেজিতে ৩৫০–৪০০ টাকার নিচে নামত না, সেই ড্রাগন ফল এখন প্রায় আধা দামে। ক্রেতাদের মুখে হাসি, বিক্রেতার মুখেও স্বস্তি কারণ কম দামে বিক্রি হলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি।
পূর্বে অভিজাত, এখন সর্বজনীন
ড্রাগন ফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া থেকে আমদানি হয়। আগে আমদানির খরচ, শুল্ক ও চাহিদার কারণে দাম ছিল অনেক বেশি। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে। উৎপাদন বাড়ায় এবং আমদানির চাপ কমায় দামও নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, "ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ফাইবার আছে, যা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কম দামে সহজলভ্য হওয়া মানে এটি এখন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার ভালো সুযোগ।"
বিশ্বের বাজারে তুলনা
থাইল্যান্ডে ড্রাগন ফলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় কেজিপ্রতি প্রায় ৬০ টাকা, ভিয়েতনামে আরও কম। ইউরোপে এই ফল ‘এক্সোটিক ফ্রুট’ হিসেবে বিক্রি হয়, যেখানে কেজি ৬–৭ ইউরো (৭০০–৮০০ টাকা)। বাংলাদেশে দাম কমার ফলে ক্রেতারা প্রায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দামের কাছাকাছি সুবিধা পাচ্ছেন।
ক্রেতার অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদপুরের গৃহিণী রওশন আরা হাসিমুখে বললেন, "আগে শুধু অতিথি আসলে কিনতাম, এখন বাচ্চাদের জন্য প্রায়ই কিনে দিচ্ছি। দাম কমেছে বলে বাজারের তালিকায় নতুন জায়গা করে নিয়েছে ড্রাগন।"
পুষ্টি ও বাজার দুই দিকেই লাভ
ড্রাগন ফল শুধু রঙে সুন্দর নয়, বরং কম ক্যালোরি ও উচ্চ পুষ্টিমানের কারণে ডায়েট ফ্রেন্ডলি। দাম কমায় এখন এটি হয়ে উঠছে প্রতিদিনের ফলের তালিকার অংশ। বিক্রেতারা আশা করছেন, এভাবে বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য বজায় থাকলে ফলটি সারা বছরই সাশ্রয়ী থাকবে।
"একসময় শুধু ধনীদের টেবিলে থাকা ফল, এখন সবার রান্নাঘরে জায়গা করছে ড্রাগন।"