সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ, টেকনাফের গ্রামগুলোতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা
প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ৪:৫৬:৪৮
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদী জেলেদের জন্য আতঙ্কের জলপথে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নাফ নদীতে মাছ আহরণরত বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাচ্ছে। গত ২৩ দিনে ৬৩ জন জেলে এবং ১০টি ট্রলার অপহরণ করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নাফ নদীতে অভিযান চালিয়ে ১২২ জন জেলেকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ২৯ জন বাংলাদেশি এবং ৯৩ জন রোহিঙ্গা জেলে।
মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদীর জলসীমানা থেকে চার দিনে আরাকান আর্মি ৪৪ জন জেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। রাখাইনে আটক ট্রলারভর্তি চোরাচালানি পণ্য জব্দের ঘটনায় গোষ্ঠীটির ক্ষোভের বিষয়ও হয়েছে। সম্প্রতি কুতুবদিয়া সাগরে রাখাইনে পাচারকালে ট্রলারভর্তি আলু জব্দ করা হয়। শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়ার জলসীমা অংশে একের পর এক ট্রলার ও জেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। টেকনাফ থেকে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়া বা মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে অস্ত্রের মুখে তাদের আটক করা হচ্ছে। ট্রলার মালিক সমিতি জেলেদের উদ্ধারের পদক্ষেপ এবং নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাকান আর্মি মূলত খাবার ও অর্থ উপার্জনের জন্য এই অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
টেকনাফের ট্রলার মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ৫ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৩ দিনে ১০টি ট্রলারসহ ৬৩ জন জেলে আটক হয়েছে। বিজিবি ও জেলে-মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ২৫০ বাংলাদেশি জেলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার ফেরত আনা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট বোট মালিক সমিতি জানিয়েছে, ৫ আগস্ট ১ নৌকা ও ২ জন, ১২ আগস্ট ১ ট্রলার ও ৫ জেলে, ২৩ আগস্ট ১ ট্রলার ও ১২ জন, ২৪ আগস্ট ২ ট্রলার ও ১৪ জন, ২৫ আগস্ট ১ ট্রলার ও ৭ জন এবং ২৬ আগস্ট ২ ট্রলার ও ১১ জনকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। গত ২২ দিনে ৫১ জন জেলেকে অপহরণ করেছে, যাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
সর্বশেষ সাগর থেকে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ২টি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, জেলেদের মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যাওয়ার পর ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিদিন আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশি ট্রলার ও জেলেদের অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গত চারদিনে ৬টি ট্রলারসহ ৪৪ জন জেলে অপহরণ করা হয়েছে।
নাফ নদীর মোহন এলাকায় বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে মাছ শিকার করার অপরাধে ১৯টি ফিশিং বোটসহ ১২২ জেলেকে কোস্টগার্ড আটক করেছে। কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তাদের আটক না করলে আরাকান আর্মি জেলেদের অপহরণ করে রাখত। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে ৫১ জন বাংলাদেশি জেলে আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছেন। বিজিবি রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জেলেদের নিরাপদে ফেরাতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ না থাকলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো জেলেকে অপহরণ না করা হয়।