প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪:০৬
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রাজ্জাক হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ হত্যা মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া নিহত রাজ্জাকের ছেলে আসাদ আহমদকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, আবদুর রাজ্জাকের লাশ উদ্ধারের পর থেকে তার ছেলে আসাদ আহমদকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ারুল কামাল মামলাটি করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম মামলার বিবরণে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যা মামলায় নিহত ব্যক্তির ছেলেকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি।’
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির পরিবার প্রথম থেকেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করে আসলেও ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। যেভাবে নিহত ব্যক্তির শরীরে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাতে আত্মহত্যা মনে হয়নি। পরিবার মামলা না করায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।’
পুলিশ আরও জানায়, শনিবার দুপুরে নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ছুরিটি ফরেনসিকের জন্য পাঠানো হয়েছে।
গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের তেলিরাই গ্রামে নিজ বাসার ছাদের সিঁড়ির পাশে একটি কক্ষ থেকে আবদুর রাজ্জাকের পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
পরিবারের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ শেষে আবদুর রাজ্জাক ছাদে হাঁটার জন্য উঠেছিলেন। এরপর সকাল ৯টার দিকে তার রক্তাক্ত মরদেহ দেখার পর পুলিশকে জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, আবদুর রাজ্জাকের পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এবং পেট, বুক ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাতের গভীর চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশের পাশ থেকে একটি ২২ ইঞ্চি লম্বা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে তাকে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে লাশ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির বাড়িতে কাউকে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে শুধু ওই বাড়ির গৃহকর্মী সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে ঢোকেন। তিনি বাড়িতে যাওয়ার পর আবদুর রাজ্জাককে তার কক্ষে পাননি। একপর্যায়ে সিঁড়ির ঘরে লাশটি দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় সিঁড়ির দরজা তালাবদ্ধ ছিল, সিঁড়ির চাবি আবদুর রাজ্জাকের কাছেই ছিল।
নিহত আবদুর রাজ্জাকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য ভারতেও গিয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একটি মামলা রয়েছে। মামলা থাকলেও নিজ বাড়িতেই অবস্থান করতেন তিনি।