প্রকাশিত :
০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৮:১৯
কয়েক দিন ধরে ময়মনসিংহ নগরীতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনাগুলো প্রকট আকার ধারণ করায় নগরবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। বাড়ছে খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, রাহাজানি, লুটের মতো ঘটনা। পথে-ঘাটে হানা দেওয়ার পাশাপাশি বাসায়ও হানা দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় ছুরিকাঘাতে রেদুয়ান জাহান রিয়াদ (২৮) নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই ঘটনায় নিহতের বাবা সাইদুল হক বলেন, 'পাটগুদাম অস্থায়ী পুলিশ বক্সের ভেতরে আমার ছেলে আহত অবস্থায় অনেকক্ষণ পড়েছিল। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমার ছেলের খুনিদের বিচার করা হোক।'
অন্যদিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) তখন রাত ৯টায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে বন্ধু মুনতাসির ফাহিম (২২)-কে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ করেন অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনিক মণ্ডল (২২)। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে এলাকায় পরিচিত। উপজেলার নজরুল একাডেমি মাঠে এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দগ্ধ হয়ে চালক জুলহাস মিয়ার (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর রাত সোয়া ৩টার দিকে উপজেলার ভালুকজান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত জুলহাস উদ্দিন উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামের বাসিন্দা সাজু মিয়ার ছেলে।
প্রকাশ্যে, জনসমক্ষেও এসব ফৌজদারি অপরাধ ঘটছে। অপরাধীরা কাউকেই তোয়াক্কা করছে না; বরং দিনে দিনে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অব্যাহত এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসীদের অনেকের কাছে অস্ত্র রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্র। পুলিশের তথ্যমতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা ও কারগারে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলবার, শটগানসহ ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে চার হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র কিছু দিন আগে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে এখনো ১২ জন গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছে।