মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম স্মৃতিচিহ্ন ভোটমারী বধ্যভূমিটি বেহাল দশায় পড়ে আছে। স্থানীয়দের দাবি এই বধ্যভূমিটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হোক। অবহেলা আর অযত্নে স্মৃতিস্তম্ভটি এখন ময়লা- আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে গোটা লালমনিরহাট জেলার ওপর পাক হানাদার ও দোসররা চালিয়েছিল নির্মম তাণ্ডব। বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীসহ নিরীহ শতাধিক মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে এই বধ্যভূমিতে। এটি ছিল রংপুর অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম বধ্যভূমি।
বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে সারাবছর। প্রতিবছর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন উপজেলা প্রশাসন সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু বছরের অন্য দিনগুলোতে কেউ খোঁজ রাখেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, জেলা শহর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে আনা ছাড়াও ট্রেনে করে অসংখ্য মানুষকে কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের মুসরত মদাতি বধ্যপুকুর বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হত। এরপর নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে এই বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।
সেসময় ভোটমারী বধ্যভূমি এলাকাটি বনজঙ্গলে ঘেরা ও নির্জন হওয়ায় অসংখ্য মানুষকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে এই বধ্যভূমি থেকে হাড়-কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পরে মিত্র বাহিনী তা ভারতে নিয়ে যায়।
ভোটমারী বধ্যভূমি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক বলেন, সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে এই বধ্যভূমিটি, এক দুইদিনের জন্য যখন ব্যবহার করা হয় তখনও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজনীয়তার চেয়ে কম করা হয়। রংপুর বিভাগের মধ্যে বড় বধ্যভূমি এটি। দেখাশোনার জন্য যদি একজনকে সরকারিভাবে দায়িত্ব দেওয়া হতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা যেত
তিনি আরও বলেন, এগুলো বাঙালির সংগ্রামের চিহ্ন। আর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বধ্যভূমিটি।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারীর এই স্থানে যে বধ্যভূমি রয়েছে এটি যেন সব সময় নান্দনিক পরিবেশে থাকে। এই বধ্যভূমির মাধ্যমে আমরা যেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করতে পারি। এজন্য উপজেলা প্রশাসনকে বিনীত অনুরোধ জানাই এই স্থানটি যেন সুন্দর পরিবেশে থাকে সেই উদ্যেগ নেয়ার।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আমরা আশা করছি উপজেলা প্রশাসন সারাবছরই বধ্যভূমির যত্ন নেবেন। আমরা চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের দেশের গৌরবের ও আত্নত্যাগের ইতিহাস জানতে পারবে।