ভোলা সদর উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা জামায়াতের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়দলের ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও নৌ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর ভোলা সদর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে তাদের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে স্থানীয় বিএনপির সমর্থক রিয়াজ ও জামায়াতের কর্মী মো. বাসারের সঙ্গে ফেসবুকে লেখালেখি নিয়ে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে স্থানীয় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা তাদের দুই জনকে ছাড়িয়ে দিয়ে রাতে এশার নামাজের পর মিমাংসা করে দিবেন বলে সময় নির্ধারণ করেন। এরপর জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভেলুমিয়া বাজারে একটি দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ইউনুস কমান্ডার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই কুট্টিসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ সময় জামায়াত সমর্থক মমিনের জুতার দোকান, আক্কাসের কাপরের দোকান, জাকিরের কাপরের দোকান ও ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক আনোয়ার কাজীর কাপরের দোকান ভাঙচুর করা হলে পুরো বাজারে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ব্যাপারে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাস্টার মো. আব্দুল হান্নান জানান, সকালের দিকে আমাদের একটি বিজয় র্যালি করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকালে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। সে সময় তাদের তাদের দুজন কর্মী আহত হয়। তাদের মধ্যে একজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেই ঘটনার জেরে মাগরিবের নামাজ শেষে তাদের লোকজন বাজারের বিভিন্ন দোকানে বসে আলোচনাকালে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের চারটি ব্যবসার প্রতিষ্ঠানে হামলা লুটপাট ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাতে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী ভোলা সদর উপজেলা আমির মাওলানা কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, সকালে বিজয় দিবসের মিছিল নিয়ে ফেরার পথে বাকবিতন্ডার ঘটনায় ভোলায় জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই দফা হামলা চালিয়েছে। সন্ধ্যার পর ভেলুমিয়া বাজারে বিএনপি আতর্কিত হামলা চালিয়ে ১০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে এবং ৪-৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেছে, তারা মিছিল নিয়ে রাজাকার স্লোগান দিয়ে এ হামলা চালায়।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. হেলাল উদ্দিন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ভেলুমিয়া বাজারে বিএনপির মিছিলের পিছন থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এতে রিয়াজ ও মিলন নামের বিএনপির দুইজন কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় বিভিন্ন যায়গায় এ হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
এদিকে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে এদিন সকালে দৌলতখান উপজেলা স্টেডিয়ামে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় জামায়াতের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। তবে এ হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন দৌলতখান উপজেলা বিএনপি ও যুবদল।