প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ৬:০২:৩৪
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বেক্সিমকোর টেক্সটাইল উৎপাদন আবারও চালু হচ্ছে। জাপান–বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ রিভাইভাল গ্রুপ লিজ নিয়ে কারখানাগুলো চালু করবে। আর এর মধ্যদিয়ে জীবিকা হারানো শ্রমিকদের জন্য আবারও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনাবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান ‘ইকোমিলি’ এই উদ্যোগে অর্থায়ন করছে।
আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। কারখানাগুলো চালু হলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজে ফিরতে পারবেন।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা বেক্সিমকো টেক্সটাইল ‘ঋণখেলাপির কারণে’ বন্ধ হয়েছিল। এতে হাজারো শ্রমিক রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েন। ছোট ব্যবসাগুলো ভেঙে পড়ে এবং পুরো শিল্পাঞ্চলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। রিভাইভালের দীর্ঘমেয়াদি লিজের সিদ্ধান্ত সেই পরিবারগুলোর জন্য নতুন আশার বার্তা নিয়ে এসেছে।
গত ৮ অক্টোবর রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড, বেক্সিমকো ও জনতা ব্যাংকের মধ্যে এ বিষয়ে খসড়া চুক্তি হয়। আগামী মঙ্গলবার জনতা ব্যাংকের বৈঠকে খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এটি পাস হলে এ মাসেই আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে রিভাইভাল ও ইকোমিলির শীর্ষ প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসতে পারেন।
রিভাইভালের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এটি শুধু একটি কারখানা চালুর ঘটনা নয়; এটি হাজারো পরিবারের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের যাত্রা।’
প্রথম ধাপে রিভাইভাল ও ইকোমিলি মিলে ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি (ঋণপত্র) সহায়তা দেবে, যা পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কারখানা ফের চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজে ফিরতে পারেন।
রিভাইভাল বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা লাভ করতে পারবে বেক্সিমকো টেক্সটাইল। এটি পুরোনো ঋণ শোধে সহায়তা করবে এবং ব্র্যান্ডকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করবে।
ইকোমিলির প্রেসিডেন্ট ফারহান এস করিম বলেন, ‘এটি ব্রেইন ড্রেন নয়—ব্রেইন গেইন। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের বন্ধন জড়িয়ে আছে।’
জাপানি ব্যবস্থাপনায় এই পুনঃউৎপাদনে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারখানা পুরোপুরি চালু হলে আগের ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনা হবে, পুরো শ্রমিক বাহিনীকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং জাপানের অভিজ্ঞ সি–সুইট কর্মকর্তারা এসে পুরো পদ্ধতি বাস্তবায়ন করবেন। এ ছাড়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানের একটি শীর্ষস্থানীয় অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে।
কারখানা চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনাই রিভাইভালের লক্ষ্য। রিভাইভালের পরিকল্পনা হলো— বেক্সিমকো টেক্সটাইলকে আবার আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত করা এবং নতুন বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব তৈরি করা। তাদের দর্শন— দেশে নকশা, বিদেশে বিক্রি, যার লক্ষ্য সস্তা পণ্যকে উন্নতমানের নকশানির্ভর বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত করা। এর জন্য তরুণ ডিজাইনারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামও চালু করা হবে।
বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান, ৩২টি কারখানার নামে ঋণ নেওয়া হলেও বাস্তবে ১৬টি কারখানা ছিল। আর্থিক সংকটের পরেও তারা যন্ত্রপাতি সচল রেখেছিলেন, যাতে সুযোগ পেলে মুহূর্তেই পুনরায় উৎপাদন শুরু করা যায়।
বেক্সিমকোর শিল্পপার্কে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছিল, যার ১২ হাজার কোটি টাকা জনতা ব্যাংকের। ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়, ১৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও শ্রম মন্ত্রণালয় একাধিক বৈঠক করে।
বেক্সিমকো টেক্সটাইলের প্রধান গ্রাহকদের মধ্যে ছিল—জারা, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টার্গেট, আমেরিকান ঈগল, পুল অ্যান্ড বেয়ার, বেস্ট সেলার ইত্যাদি।
কারখানা চালুর পর প্রথম তিন মাসের অপারেশনাল খরচ মেটাতে নতুন অর্থায়ন প্রয়োজন হবে। কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী, মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় লাগবে।
রিভাইভাল বলছে, জাপানের নিখুঁত পরিকল্পনা, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সক্ষমতা ও বাংলাদেশের শ্রমিকদের দৃঢ়তা—এই তিন শক্তির সমন্বয়ে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের পুনর্জাগরণ বাংলাদেশের শিল্প পুনরুদ্ধারের প্রতীক হয়ে উঠবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে উৎপাদন শুরু হবে। সংশ্লিষ্টদের আশা, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে, যা বকেয়া ঋণ পরিশোধ করে শিল্পটির স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।