প্রতিদিনের অভ্যাসই হয়ে উঠতে পারে ধীর বিষের উৎস।
প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১:৪০:৫২
কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, সাধারণ টি-ব্যাগের তাপ সহ্যক্ষম প্লাস্টিক আবরণ গরম পানিতে ভেঙে গিয়ে কোটি কোটি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ছাড়ে, যা মানবদেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সকালের চা দিয়ে দিন শুরু এ অভ্যাস কোটি মানুষের। কিন্তু সেই চা-ই যদি অজান্তে শরীরে ঢুকিয়ে দেয় ক্ষতিকর প্লাস্টিক কণা? সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, বাজারে প্রচলিত অনেক টি-ব্যাগে ব্যবহৃত হয় নাইলন বা পলিপ্রোপিলিন প্লাস্টিক, যা গরম পানির সংস্পর্শে ভেঙে গিয়ে মুক্ত করে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিক কণা।
গবেষণার চমকপ্রদ ফলাফল
কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল পরীক্ষায় দেখেছেন, এক কাপ গরম চায়ে ডুবানো একটি টি-ব্যাগ থেকে ১১ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ৩ বিলিয়ন ন্যানোপ্লাস্টিক কণা মুক্তি পেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কণাগুলো এত ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু এগুলো মানবদেহের কোষে প্রবেশ করতে সক্ষম।
সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো দীর্ঘমেয়াদে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, এমনকি হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গবেষক ড. লিসা মোরি বলেন, “আমরা এখনও প্লাস্টিক কণার মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পুরোপুরি জানি না, কিন্তু প্রাথমিক প্রমাণগুলো উদ্বেগজনক।”
গ্লোবাল প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ এখন বড় স্বাস্থ্য ইস্যু। সমুদ্র থেকে পাহাড়, এমনকি মানুষের রক্তেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে কিছু প্লাস্টিকজাত খাদ্যপ্যাকেজে কঠোর নিয়ম চালু করেছে। গবেষকরা মনে করছেন, টি-ব্যাগের ক্ষেত্রেও বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহারের সময় এসেছে।
দর্শকের বিকল্প পছন্দ
পুষ্টিবিদরা বলছেন, যারা চা পানের অভ্যাস ছাড়তে চান না, তারা ঢেলে চা বানানোর (loose leaf tea) পদ্ধতি বা কাপড়ে তৈরি টি-ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এসব বিকল্পে প্লাস্টিকের ঝুঁকি অনেক কম।
“এক কাপ চা শুধু শান্তি নয়, প্লাস্টিকও দিচ্ছে এটি ভাবনার সময় এসেছে।” ড. লিসা মোরি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ