শুধু সময় দেওয়া নয়, সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে প্রয়োজন সচেতন মনোযোগ ও সহমর্মিতা।
প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০:০৯
আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না, সন্তানের সঙ্গে আমাদের মানসিক দূরত্ব কতটা বেড়ে গেছে। অফিসের কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া বা দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের ভিড়ে কোথাও যেন হারিয়ে যায় সন্তানের সঙ্গে সেই গভীর, হৃদয়ছোঁয়া আলাপ। অথচ সম্পর্ক গড়তে বা শক্ত করতে কেবল ভালোবাসা নয়, চাই সচেতন ভালোবাসা-যা পরিকল্পিত, মনোযোগী এবং সন্তানের আবেগ বোঝার জন্য নিবেদিত। মনোবিজ্ঞানী ড. নুসরাত রহমান বলেন, “ভালোবাসা সব বাবা–মায়ের মাঝেই থাকে। কিন্তু সেটি প্রকাশের ধরন, সময় দেওয়া এবং আবেগ বোঝা-এই বিষয়গুলো সচেতনভাবে করতে হয়। নইলে সন্তান মনে করে, তার কথা শোনার বা বোঝার মানুষ কেউ নেই।”
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা বলছে, সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত মানসম্পন্ন সময় কাটানো শুধু সম্পর্কের বন্ধনকেই মজবুত করে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস, সহমর্মিতা ও সামাজিক দক্ষতাও বাড়ায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে বাবা–মায়ের সন্তানদের সঙ্গে ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোর জন্য আলাদা ছুটি দেওয়ার নীতি আছে। ফলে শিশুরা বড় হয় অধিক আত্মবিশ্বাসী ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল হয়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বাবা–মা অনেক সময় সন্তানকে ভালো স্কুল, ভালো পোশাক বা প্রযুক্তি দিয়ে খুশি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, আসল বিনিয়োগ হচ্ছে সময় ও মনোযোগ। সন্তানের কথা শোনা, তাদের ছোট ছোট অর্জনে উচ্ছ্বসিত হওয়া কিংবা একসঙ্গে খাবার খাওয়ার মতো সহজ বিষয়গুলোও সম্পর্ককে গভীর করে। পরিবার বিশেষজ্ঞ আব্দুল কাদের বিশ্বাস করেন, সচেতন ভালোবাসা মানে হলো-সন্তানের পৃথিবীতে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। তিনি বলেন, “শুধু ‘পড়াশোনা করেছ?’ জিজ্ঞেস করলেই হবে না। জানতে হবে তার বন্ধু কারা, সে কিসে আনন্দ পায় বা কীসে ভয় পায়।” এমনকি প্রযুক্তিকেও সম্পর্ক গড়ার অংশ করা যেতে পারে যেমন একসঙ্গে সিনেমা দেখা, অনলাইন গেম খেলা বা রান্না শেখা। তবে শর্ত হলো, সময় যেন মনোযোগী হয় এবং কথোপকথন যেন খোলা থাকে।
বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বাবা–মায়ের ভালোবাসা সন্তানের জীবনে নিরাপত্তার প্রথম স্তর তৈরি করে। সচেতন ভালোবাসা সেই স্তরটিকে আরও শক্তিশালী করে, যা সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
"ভালোবাসা থাকে, কিন্তু সেটি প্রকাশের ধরন ও সময় দেওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হয়।" ড. নুসরাত রহমান