প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ৪:৩৪:০৩
ট্রেইলে দৌড়ানোর সময় ফোন বেজে উঠতেই আপনি থেমে গেলেন। চারপাশে পাখির ডাক, রোদের আলো, বুনোফুল—মনোযোগ দেওয়ার মতো অনেক কিছু থাকলেও, আপনার দৃষ্টি আটকে গেল ব্যক্তিগত-ইমেলে। যে ইমেল তিন ঘণ্টা পরে দেখলেও খুব একটা ক্ষতি হতো না। ভাবুনতো ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজের মনোযোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আপনি কতটুকু হারিয়ে ফেলেছেন!
এই অভিজ্ঞতা আপনার একার নয়। আজকের ‘অলওয়েজ-অন’ যুগে নোটিফিকেশন, মেসেজ, আপডেট—সব মিলিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত মনোযোগ হারাচ্ছি। সংযোগের প্রতিশ্রুতি দিলেও, প্রযুক্তি আমাদের অনেক সময় গভীর বিক্ষিপ্ততার দিকে ঠেলে দেয়। নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন সচেতন ডিজিটাল অভ্যাস। সেই অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আপনি ৮টি কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।
১) দিনের শুরুতেই নির্দিষ্ট ডিজিটাল বাউন্ডারি
মোবাইল ছাড়া প্রতিদিনের সকালটা কাটানোই হতে পারে মনোযোগ ফেরানোর প্রথম পদক্ষেপ। কোনো ইমেল নয়, সোশ্যাল মিডিয়াও নয়—দিন শুরু হোক নিজের মতো করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ায়।
২) অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নোটিফিকেশনের কারণে মনোযোগ বিঘ্নিত হলে পুরো ফোকাসে ফিরতে গড়ে ২৩ মিনিট সময় লাগে। তাই ফোনের নোটিফিকেশন কমিয়ে আনাই মনোযোগ ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়।
৩) ঘরে ‘টেক-ফ্রি জোন’ তৈরি করুন
শোবার ঘর বা ডাইনিং টেবিলে ফোন ব্যবহার করলে ঘুমের মান কমে যায় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হয়। এসব জায়গায় ফোন নিষিদ্ধ রাখলে ঘরোয়া পরিবেশ ও সম্পর্ক দুটোই লাভবান হয়।
৪) মাল্টিটাস্কিং নয়, সিঙ্গেল-টাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং কার্যকর মনে হলেও বাস্তবে এটি মানসিক চাপ বাড়ায়। আমাদের মস্তিষ্ক একই সময়ে একাধিক কাজ করতে সক্ষম নয়; বরং দ্রুত কাজ বদলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মানসিক শক্তি দ্রুত ক্ষয় হয়। এই ক্রমাগত কাজ বদলানোর প্রক্রিয়াকে বলা হয় টাস্ক-সুইচিং, যা মস্তিষ্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে—এমনটাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।
৫) নিয়মিত ডিজিটাল ডিটক্স
মাসে একদিন কিংবা সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা শুধু আরাম দেয় না, বরং মস্তিষ্ককে কার্যকরভাবে রিসেট করতে সাহায্য করে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দিনভর অনবরত স্ক্রলিং, নোটিফিকেশন আর তথ্যের চাপ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উদ্দীপ্ত করে তোলে। এর ফলে মনোযোগ কমে যায়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং মানসিক ক্লান্তি বাড়ে।
৬) অযথা স্ক্রলিংয়ের বদলে উদ্দেশ্যমূলক কিছু করুন
বই পড়া, নোট লেখা, হাঁটা—এই সব বিকল্প অভ্যাস মানসিক পরিতৃপ্তি দেয়। সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো বেশিরভাগ সময়ে উল্টো শূন্যতা বাড়ায়।
৭) নিজের ডিজিটাল অভ্যাস নিয়ে নিয়মিত রিফ্লেকশন
জার্নালিং বা সেলফ-রিফ্লেকশনের মাধ্যমে বোঝা যায় কখন এবং কেন আমরা ফোনের দিকে হাত বাড়াই। এতে খারাপ অভ্যাসগুলি সহজেই শনাক্ত করা যায়।
৮) শরীরের সঙ্গে পুনঃসংযোগ
অতিরিক্ত স্ক্রলিংয়ে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাথা ভার, অস্থিরতা, টানটান কাঁধ—সবই এর লক্ষণ। রান্না, হাঁটা, ব্যায়াম—এসব শারীরিক কাজ মনকে আবারও বর্তমানে ফিরিয়ে আনে।
ডিজিটাল জীবনকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব। মনোযোগ ফিরে পাওয়া মানে শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়ানো নয়—এটা নিজের কাছে ফিরে আসারও একটি প্রক্রিয়া। ভুল করবেন, আবার ফিরে যাবেন ফোনে—এটা সত্যি। কিন্তু প্রতিবার আপনি যখন মনোযোগ ফেরাতে পারেন, তখনই বুঝবেন—এখনও নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই।