প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ৪:০৩:০৭
জুলাই গণঅভু্ত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ জানা যাবে আগামী ১৩ নভেম্বর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ তারিখ নির্ধারণ করেছে। রায়ের দিনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা।
ইতোমধ্যেই কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞায় থাকা আওয়ামী লীগের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচির দিনে ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের সামনেসহ কয়েকটি জায়গায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এতে জনমতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চারটি জায়গায় ককটেল হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এসব হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া ঢাকার দুইটি জায়গায় যাত্রীবাহী বাস আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে।
এদিন ভোরে রাজধানীর মিরপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কেও এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমান। তিনি বলেন, ‘ভোর ৪টার দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কে বা কারা একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। আর হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি আরও জানান, আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি একটি বাইকে করে দুইজন এসে গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে একটি ককটেল ছুড়ে চলে যায়। আমরা ছবি পেয়েছি, তাদেরকে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে ‘প্রবর্তনা’র সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ‘প্রবর্তনা’ অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে এতে কেউ আহত বা হতাহত হয়নি।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ককটেল দুইটির একটি ‘প্রবর্তনার’ ভেতরে ও আরেকটি বাইরে বিস্ফোরিত হয়। একটি মোটরসাইকেলে আসা দুইজন আরোহী ককটেল ছুঁড়ে মারে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে তদন্তে নেমেছে বলে জানান তিনি।
ঠিক একই সময়ে ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে মাইডাস সেন্টারের সামনে অজ্ঞাত দুই-তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে ককটেল ছুড়ে মেরে পালিয়ে যায়। এছাড়াও ধানমন্ডি ৯/এ ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে ককটেল ফাটানো হয় বলে জানিয়েছেন ধানমন্ডি থানা পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলীম। এই হামলাতেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই সদস্য।
যদিও বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে ঘটে চলেছে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। গত ৭ নভেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল গির্জায় দুটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলেও আরেকটি অবিস্ফোরিত থেকে যায়। পরে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এসে সেটি নিষ্ক্রিয় করে।
একই দিন রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের তিন নম্বর ফটকের ভেতরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ ছিল না। ঠিক সেই সময় ৩ নম্বর ফটকের বাইরে থেকে একটি ককটেল ভেতরে ছুড়ে মারা হয়। এতে বিস্ফোরণ হয়।
এদিকে শুধু ককটেল নিক্ষেপ করাতেই থেমে নেই নাশকতাকারীরা। যানবাহনেও আগুন দিতে শুরু করেছে তারা। সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোররাতে রাজধানীর আধঘণ্টার ভেতর মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাস দুটির একটি ভিক্টর পরিবহন ও আরেকটি আকাশ পরিবহন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানিয়েছেন সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার।