প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ৯:০০:৩২
ভিসা জটিলতা নতুন না, এটা আগেও ছিল। তবে প্রশ্ন হলো এসব জটিলতা নিয়ে আমরা কাজ করছি কিনা, কতটুকু কমলো ভিসা জটিলতা। আসলে তেমন দৃশ্যমান কোনো সমাধান হয়নি। আজও ভিসা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদের।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থীই আছেন যারা স্কলারশিপ পেয়েছেন এরপরও শুধুমাত্র ভিসা না পাওয়ায় যেতে পারছেন না।
এমনই একজন তানজুমান আলম ঝুমা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঙ্গেরি আর যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। পেয়েছেন স্কলারশিপও। কিন্তু শুধু ভিসা জটিলতার কারণে যেতে পারেননি দুই দেশের কোনোটিতেই।
মেয়েটি বলেন, অক্টোবরে বুদাপেস্টে অ্যাপ্লাই করি। জানুয়ারিতে ওটা আমার জন্য 'নো' হয়ে আসে। পরে জানুয়ারিতে ইউএসের জন্য অ্যাপ্লাই করি। মোটামুটি গত বছর অক্টোবর থেকে এই নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক বছরের বেশি সময় আমার এর পেছনে চলে গেছে।
শুধু শিক্ষার্থী ভিসাই না, বহুদেশ ঘোরা ব্যক্তি কিংবা কাজের জন্যে শ্রমিক ভিসাও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে।
এমনকি ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো যে দেশগুলো থেকে সহজেই ভিসা পাওয়া যেত এতদিন, তারাও অনেক ক্ষেত্রে ভিসা দিচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। অথচ ভারতের পর্যটন ভিসা ছাড়া কার্যত কোনো দেশ থেকেই বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিসার অপব্যবহার করে একদেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে কমেছে বিশ্বাসযোগ্যতা। এছাড়াও দেশের বাইরে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্য বিবাদে জড়ানোর বিষয়টাও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
কোন দেশগুলো ভিসা দিচ্ছে না?
কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকার পরও বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না বেশ কয়েকটি দেশ। বিদেশে পড়তে, কাজ করতে কিংবা বেড়াতে যেতে আগ্রহীদের অনেকেই জানিয়েছেন এমন অভিযোগ। একই সমস্যার কথা জানিয়ে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশগুলো ভ্রমণসহ অনেক ধরনের ভিসা দিচ্ছে না।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামানের মতে ইন্ডিয়া, ইউএই, কাতার, বাহরাইন, ওমান, উজবেকিস্তান, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম আমাদের ভিসা দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের ভিসা অনেক বেশি সময় নেয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসার রেশিও কম। ফিলিপাইন অনেক বেশি সময় নেয়। ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফি অনেক। এমনকি অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া শ্রীলঙ্কার ইলেক্ট্রনিক ভিসা হতেও সময় নিচ্ছে দুই-তিন দিন।
২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত। দেশটির এই সিদ্ধান্তকে অনেকটা রাজনৈতিক হিসেবে দেখা হলেও ঘোষণা ছাড়াই ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে সব ধরনের ভিসা পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতগুলো দেশের ভিসা নিয়ে এমন জটিলতা খুব বেশিদিনের না। এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সেলিম জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরই বাংলাদেশিদের জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ ভি১, ভি২ ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই বছর দেশটির দূতাবাস মনে হয় না দুই লাখের বেশি ভিসা দিয়েছে।
কেন ভিসা দিচ্ছে না?
ভিসা জটিলতার কারণ হিসেবে অনেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কারণ হিসেবে মনে করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল আরও গভীরে। তাদের মতে, অনিয়মিত পথে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে ঢোকার প্রবণতা, আর তা করতে সহজলভ্য দেশের ভিসা নিয়ে অন্যদেশে পাড়ি জমানোর ঘটনা দেশগুলোর প্রশাসনের চোখে পড়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভিসা পাওয়ার সুযোগে বা এটাকে অপব্যবহার করে অনেকে কিন্তু অনিয়মিতভাবেও যাচ্ছে। এবং সে প্রবণতার কারণেই আমার ধারণা যে দেশগুলোতে খুব বেশি অভিবাসনবিরোধী বাতাবরণ নেই সেই দেশগুলোও কিন্তু এখন সতর্ক হচ্ছে। যেমন ধরুন ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড।
এমনকি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে লোক পাঠিয়ে শ্রমিক ভিসায় রূপান্তর করেন বলেও অভিযোগ আছে। আবার প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা ভিসা নিয়ন্ত্রণের কারণে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু দেশ আরেও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
যার কারণে অল্প সংখ্যক মানুষের 'অনিয়মিত' বা আইন বহির্ভুত কাজে যুক্ত থাকার ফল অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। একইসাথে সেসব দেশে গিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল বা বিবাদে জড়ানোর ঘটনাও দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে নানা দেশের ভিসা জটিলতায়।