প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৬:২১
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামালের সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামিজক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকালে ফোসবুকে তিনি তার ভেরিফাইড আইডি থেকে পোস্টটি করেন।
পাঠকদের জন্য প্রেস সচিবের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামালের শক্তি হলো তার অসাধারণ ভাষাগত সাবলীলতা। বহু বছর আগে তিনি শত্রুর সাথে বসবাস (Sleeping with the Enemy) বইটি ঘোস্টরাইট করেছিলেন—যা আমার মতে এটা তার এখনো উল্লেখযোগ্য সফট-অ্যাডাল্ট স্মৃতিকথা। আপনি যদি এখনো বইটি না পড়ে থাকেন, পড়ে দেখতে পারেন; একজন তরুণীর বৃদ্ধ প্রাক্তন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সঙ্গে জটিল সম্পর্ককে বইটি অবিশ্বাস্য খোলামেলাভাবে তুলে ধরে।
মাসুদ কামালের গদ্য দ্রুতগামী, সাবলীল ও প্রাণবন্ত—চটি ধরনের লেখার জন্য একেবারে উপযোগী। শত্রুর সাথে বসবাস প্রকাশের পর যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, তবে তা সার্কুলেশনে টিকে গিয়েছিল—সম্ভবত এজন্যই যে জেনারেল এরশাদ ছিলেন একজন ভদ্রলোক!!! মনে আছে, আমি বইটি নিয়ে এএফপি-র জন্য একটি রিপোর্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি, কারণ আমরা মানহানির আশঙ্কায় ছিলাম। বইটি নিয়ে এরশাদ কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি সেই সময়ে বিরল এক ধরনের সংযম প্রদর্শন করেছিলেন।
তবে মাসুদ কামালের সাংবাদিকতার সমস্যাটি হলো—তিনি মাঝে মাঝে তার কল্পনাপ্রবণ লেখনশৈলী টিভি মন্তব্যেও নিয়ে আসেন। অথচ টেলিভিশন বিশ্লেষণ, সাহিত্যিক গল্পের মতো নয়; সেখানে কঠোর তথ্যভিত্তিক নির্ভরতা জরুরি। সরাসরি টক শো-তে সতর্ক থাকতে হয়; একবার কিছু বলা হলে তা আর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
তবু মাসুদ কামাল ও আরেকজন সমসাময়িক খোলামেলা বক্তা আনিস আলমগীর প্রায়ই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ততটা মনোযোগী বলে মনে হয় না। আজকের ভিডিও-নির্ভর গণমাধ্যমে এ ধরনের ভুল সহজেই দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে। আমরা এখন এমন এক যুগে বেঁচে আছি যেখানে তথ্য চলে অত্যন্ত দ্রুত—আর ভুল তথ্যও ছড়িয়ে পড়ে ঠিক ততটাই দ্রুত।
এ ধরনের বিষয় তুলে ধরলে কিছু মন্তব্যকারী দ্রুত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাক্যটির আড়ালে আশ্রয় নেন, ভুলে যান যে এই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বও জড়িত।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে পোস্ট দেন শফিকুল আলম। তিনি তার পোস্টে লেখেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মতিউর রহমান চৌধুরীর মানবজমিন নানা ধরনের মিথ্যা ও মনগড়া খবর প্রকাশ করছে। হয়তো তিনি মনে করেন, ট্যাবলয়েড পত্রিকার ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার নীতিশাস্ত্র প্রযোজ্য নয়। অথচ যুক্তরাজ্যে ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো নিয়মিতভাবেই সাংবাদিকতার মান লঙ্ঘন বা মানুষের সুনাম ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে কোটি কোটি পাউন্ড জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে মানহানির মামলার তেমন কোনো বাস্তব ফলাফল দেখা যায় না। ফলে পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালগুলো প্রায়ই ইচ্ছেমতো গল্প বানিয়ে ছাপিয়ে পার পেয়ে যায়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তারা “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা”র আড়ালে আশ্রয় নিতে চায়। তারা ভালো করেই জানে, যতই ভিত্তিহীন কথা বলুক না কেন—কখনও তার জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে না।
তারপরও পত্রিকাগুলোর কিছু সম্পাদক নিয়মিত অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশে প্রেস ফ্রিডম নেই—এবং হাসিনা সরকারের পতনের পরও নাকি কোনো পরিবর্তন হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রায়ই এসব অভিযোগে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। অথচ তারা খুব কমই গবেষণা করে দেখেন: আসলে দায়ী কে, কিংবা যেসব শত শত সাংবাদিককে নাকি হামলা বা হয়রানি করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এসব ঘটনার কারণ সত্যিই সাংবাদিকতা ছিল কিনা, নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু।
আগেও বলেছি, ইন্টারিম সরকার গঠনের পর থেকেই আমাদের দেশের সাংবাদিকরা স্বাধীনতা ভোগ করছেন। তারা প্রায় যেকোনো কিছু লিখতে বা বলতে পারেন—এমনকি সামরিক বাহিনী সম্পর্কে অসত্য বা মনগড়া মন্তব্যও। কিন্তু তবুও তারা বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম। প্রায়ই শোনা যায় সেই পরিচিত আক্ষেপ: দেশে কি আর জার্নালিজম করার পরিবেশ আছে!!