আপডেট :
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৪৪:০৮
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে ‘টানাপোড়েন আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী নসিহত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আজ বুধবার যেভাবে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছেন, সেটিও ‘খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না’ বলে মনে করেন তিনি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী নসিহত করার চেষ্টা করছে। এটা সরকারের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। গত ১৫ বছরে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এমন নসিয়ত করেনি, তাহলে এখন কেন করছে?
তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিতেন। এখন তিনি সংবাদমাধ্যমেও বক্তব্য দিচ্ছেন। তার বক্তব্যে যথেষ্ট উসকানি আছে। আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে তিনি পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন—এটাতে তো আমরা আপত্তি জানাবই। আমরা তো তাকে ফেরত চাইবই। কিন্তু ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাচ্ছে না। তার বক্তব্য বন্ধ করছে না। উল্টো সর্বশেষ তারা কিছু নসিহত করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে—এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। এই সরকার অত্যন্ত ভালো পরিবেশে একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যা গত ১৫ বছর ছিল না। এখন ভারত এটা নিয়ে আমাদের উপদেশ দিচ্ছে, এটাকে আমি অগ্রহণযোগ্য মনে করি। কারণ, গত প্রহসনের নির্বাচনগুলোতে তারা কোনো শব্দ করেনি। এখন আমরা যখন একটি ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, তখন তারা নসিহত করছে। এটা অগ্রহণযোগ্য।
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে তলবের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না। সাধারণত এটা ঘটে। একজনকে ডাকলে আরেকজনকে ডাকা হয়। এটা বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে, আসলে এই সরকারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত (সম্পর্কে) টানাপোড়েন তো আছেই ভারতের সঙ্গে।’
তবে ‘সম্পর্কের এই টানাপোড়েন’ মেনে নিয়েই বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘তবে আমরা চাইলেই যে হবে, এমন কোনো কথা নেই। দুপক্ষ থেকেই সম্পর্ককে এগোনোর চেষ্টা করতে হবে।’
এ সময় ভারতের সেভেন সিস্টারস নিয়ে সম্প্রতি এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। আমরা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে আমাদের ভূমিতে আমরা আশ্রয় দেব না। একজন রাজনৈতিক নেতা বলতে পারেন। কিন্তু এদেশের কোনো সরকারই এটাকে সমর্থন করবে না।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত সব সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
দুপুরে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে হুমকি ও বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের ভারতবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানাতে’ এই তলব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।