প্রকাশিত :
১০ নভেম্বর ২০২৫, ৯:১৪:০৭
অনশন মানে উপবাস। কোনো রকম খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। খাদ্যাভাবে উপবাস অনশন নয়, কারণ তা হলো দরিদ্রের আর্থ-সামাজিক সমস্যা। প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রায় সব ধর্মেই অনশনের বিধান ছিল। রাজনৈতিক অনশন মূলত ধর্মীয় অনশন থেকেই উদ্ভূত।
হিন্দুধর্মে পূজা-পার্বণের আগে কিংবা কোনো ব্রত অর্জনের লক্ষ্যে আমৃত্যু অনশন করার বিধান রয়েছে। অনশন তিন রকম—স্বল্পানশন, অর্ধানশন ও পূর্ণানশন।
অনশন দীর্ঘ হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের অনশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ জীবন রক্ষা করা এবং শরীরকে শক্তি ও কর্মক্ষম রাখার জন্য খাবার খাওয়া ওয়াজিব।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ কোরো না। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৫)
আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আবি সৌদ (রহ.) তার গ্রন্থ ‘ফাতহুল মঈন’-এ লিখেছেন, ‘মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা ফরজ।’
একইভাবে ‘ফাতাওয়া আলমগীরী’তে বলা হয়েছে, ‘যতটুকু খেলে জীবন রক্ষা পায়, ততটুকু খাওয়া ফরজ। কেউ যদি খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয় এবং সেই কারণে মারা যায়, তবে সে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।’
আরও বলা হয়েছে : ‘যদি কারো ক্ষুধা লাগে, অথচ খাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে গুনাহগার হবে।’
উল্লিখিত মাসআলাগুলো থেকে বোঝা যায়, খাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না খাওয়া, এমনকি তাতে মৃত্যু ঘটলে, এটি জঘন্য গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, কারণ এটিও এক প্রকার আত্মহত্যা। আর আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করবে সে যেরূপ বলেছে সেরূপ হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে তাকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে সে বস্তু দ্বারা শাস্তি দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লৌহ অস্ত্রের মাধ্যমে যে লোক আত্মহত্যা করবে, সে ওই অস্ত্র হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাজির হবে। জাহান্নামে সে এটা সর্বদাই তার পেটের মধ্যে বিদ্ধ করতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে ওই বিষ হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাজির হবে জাহান্নামে। সে ওটা সর্বদা পান করতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে যে লোক আত্মহত্যা করবে, সে সর্বদাই জাহান্নামের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে থাকবে এবং চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৪), নাউজুবিল্লাহ।
ইসলাম জীবনের ভারসাম্য ও সংযমকে ভালোবাসে। তাই প্রতিবাদের নামে ইসলামের নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি বা আত্মঘাতী আচরণ করা যাবে না। দুনিয়াবি স্বার্থ তো দূরের কথা, ইবাদতের ক্ষেত্রেও ইসলামের নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমার (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জানানো হলো যে আমি বলছি, আল্লাহর কসম! আমি যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন অবশ্যই আমি অবিরত দিনে সওম পালন করব আর রাতে ইবাদতে রত থাকব। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমিই কি বলেছ, আল্লাহর শপথ! আমি যত দিন বাঁচব, তত দিন সওম পালন করব এবং রাতে ইবাদতে মশগুল থাকব। আমি আরজ করলাম, আমিই তা বলেছি। তিনি বললেন, সেই শক্তি তোমার নেই। কাজেই সওমও পালন করো, ইফতারও করো। রাতে ইবাদতও করো এবং ঘুমও যাও।...(বুখারি, হাদিস : ৩৪১৮)
ইসলাম মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও ভারসাম্য রক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাই কোনো দাবি আদায় বা প্রতিবাদ প্রকাশের জন্য খাবার না খেয়ে অনশন করা ইসলামসম্মত নয়।
সূত্র: কালের কন্ঠ