প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২২:৩০
বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন যেন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, খবর, যোগাযোগ, বিনোদন— সব কিছুতেই আমরা এই ছোট্ট ডিভাইসটির উপর নির্ভরশীল।
কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন যে, এই নির্ভরতা কখন ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হয়েছে? সকাল ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত, আমরা প্রায় অবিরাম মোবাইলের পর্দায় তাকিয়ে থাকি। এর ফলে কমছে মনোযোগ, বাড়ছে উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা আর একাকীত্বের অনুভূতি।
সপ্তাহে একদিন ‘মোবাইল ছুটি’ নেওয়া হতে পারে এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার এক সহজ উপায়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট একটি দিন মোবাইল ছাড়া কাটানো। শুনতে কঠিন মনে হলেও, এটি হতে পারে আপনার মানসিক ভারসাম্য ফেরানোর প্রথম পদক্ষেপ।
জেনে নেওয়া যাক, সপ্তাহে একদিন মোবাইল থেকে বিরতি নেওয়া কেন জরুরি এবং এটি কিভাবে আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।
১. মানসিক চাপ কমায়
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের জীবন দেখে অনেক সময় নিজের প্রতি অসন্তুষ্টি জন্মায়। তারা এত ভালো আছে, আমি কেন না?— এই তুলনাই আমাদের অজান্তে ক্লান্ত করে তোলে। ফোন থেকে দূরে থাকলে এই চাপ কমে যায়। নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ে, মন হয় হালকা।
২. ঘুমের মান উন্নত করে
ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করলে চোখে নীল আলো লাগে, যা ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর নিঃসরণ কমায়। ফলে ঘুম গভীর হয় না, সকালে ক্লান্তি লাগে। একদিন ফোনবিহীন কাটালে আপনি বুঝবেন, ঘুম কতটা প্রশান্ত হতে পারে।
৩. সম্পর্ককে বাস্তব করে তোলে
পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় আমরা প্রায়ই ফোনে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু একদিন মোবাইল ছাড়া থাকলে আপনি কথাগুলো মন দিয়ে শুনবেন, মুখের হাসিগুলো খেয়াল করবেন। বাস্তব সংযোগের এই অনুভূতি ডিজিটাল যোগাযোগের চেয়ে অনেক বেশি গভীর।
৪. মনোযোগ ও মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ায়
মোবাইল স্ক্রিনের ক্রমাগত নোটিফিকেশন আমাদের মনোযোগ ভেঙে দেয়। এক কাজ করতে করতে আরেকটিতে চলে যাই, ফলে কোনো কিছুতেই মন বসে না। একদিন মোবাইল ছাড়লে মস্তিষ্ক কিছুটা বিশ্রাম পায়। চিন্তা স্পষ্ট হয়, মন শান্ত হয়, এমনকি সৃজনশীল ভাবনাও ফিরে আসে।
৫. আত্মসমালোচনার সুযোগ করে দেয়
মোবাইল থেকে দূরে থাকলে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মেলে। জীবনের দৌড়ঝাঁপের বাইরে গিয়ে আপনি ভাবতে পারবেন— কোথায় যাচ্ছেন, কী চান, কী বদলানো দরকার। এই আত্মসমালোচনা মানুষকে আরও পরিণত ও সচেতন করে তোলে।
৬. সময় ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনে
মোবাইল ছাড়া একদিন কাটানো মানে হঠাৎ অনেকটা সময় হাতে পাওয়া। এই সময় বই পড়া, হাঁটাহাঁটি, রান্না বা পরিবারের সঙ্গে গল্প করার মতো কাজ করতে পারেন। আপনি দেখবেন— সময় আসলে কম নয়, আমরা শুধু ভুল জায়গায় তা নষ্ট করি।
যেভাবে শুরু করবেন- প্রথমে একটি দিন বেছে নিন। হয়তো শুক্রবার বা শনিবার। আগেভাগে প্রিয়জনদের জানিয়ে দিন, ওইদিন আপনি ফোনে থাকবেন না। প্রয়োজনে জরুরি যোগাযোগের জন্য কাউকে বিকল্প নম্বর দিন। ফোন বন্ধ রেখে বই, হাঁটা, পরিবার বা নিজের কোনো শখে সময় দিন।