বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০ শতাংশ পাল্টা
প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৬:২৫
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০ শতাংশ পাল্টা (পারস্পরিক) শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আগের ১৫ শতাংশ গড় শুল্কের সঙ্গে মিলিয়ে মোট ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। নতুন এই শুল্ক হার আগামী ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এটি বাংলাদেশের রফতানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তবে সুযোগও তৈরি হতে পারে।
শুল্ক কে দেবে? প্রভাব কার ওপর?
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শুল্ক প্রদান করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, তবে তারা সেই খরচ পণ্যের দামে যুক্ত করে চাপিয়ে দেয় ভোক্তার ওপর। অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তার ব্যয় বাড়াবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “এই বাড়তি শুল্ক আমদানিকারককেই বহন করতে হবে। তবে তারা সেটি পণ্যের দামে যোগ করবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের খুচরা মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে এবং অর্ডার কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।”
বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব ফেলবে?
১. মূল্য প্রতিযোগিতা কমবে: নতুন শুল্কে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে ক্রেতারা ভিয়েতনাম বা মেক্সিকোর মতো দেশের দিকে ঝুঁকতে পারেন।
২. রফতানি আদেশ কমে যেতে পারে: বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের অর্ডার কমিয়ে দিতে পারে বা বিকল্প দেশ বেছে নিতে পারে।
৩. চাপ বাড়বে শ্রমিক ও উৎপাদনে: অর্ডার কমলে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।
৪. নগদ প্রবাহ সংকট: কম রফতানি আয় মানেই কারখানাগুলোর আর্থিক চাপে পড়া।
৫. কৌশলে পরিবর্তন জরুরি: বিকল্প বাজার ও উচ্চমূল্যের পণ্যে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান স্বস্তি নাকি বিভ্রান্তি?
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও কম শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে পারছে। ভারতীয় পোশাকে শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশের বেশি, যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ হলেও গড় হার তুলনামূলক কম।
তিনি বলেন,
এই শুল্ক বাড়তি চাপ তৈরি করলেও আমাদের প্রতিযোগীরা একই নীতিতে আছে। ফলে কিছুটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব বাজারে শুল্কের প্রভাব
বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই উচ্চ শুল্কনীতির ফলে গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স ও ভোক্তা পণ্যের দাম বেড়েছে। বিনিয়োগ স্থবির, উৎপাদন খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ শুল্কে বাজারে অস্থিরতা বাড়ে, ফলে প্রতিক্রিয়া ও পুনর্মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়ে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: কূটনৈতিক বিজয়
সরকার ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ‘যুগান্তকারী বাণিজ্য চুক্তির’ ফল হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “৩৫ শতাংশের জায়গায় ২০ শতাংশে শুল্ক নামিয়ে আনাটা কূটনৈতিক সফলতা।” জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, “এটি আমাদের তৈরি পোশাক খাত রক্ষায় বড় অর্জন।”
শুল্কের বাড়তি বোঝা বাংলাদেশের জন্য যেমন একটি তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ, তেমনি কৌশলগতভাবে প্রস্তুত হলে এটি একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন জরুরি রফতানি বাজারে বৈচিত্র্য, উৎপাদনে দক্ষতা, ও উচ্চমূল্যের পণ্যে অগ্রগতি। মার্কিন বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন প্রযুক্তি, কৌশল ও সরকারের কার্যকর সমন্বয়।