আল-জাজিরার প্রতিবেদন
প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৫:১৭:৪৫
দীর্ঘদিন ক্ষমতাচ্যুত থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণার প্রাক্কালে দেশজুড়ে সহিংসতার নতুন ঢেউ উঠেছে। মামলার প্রতিবাদে তার দল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী ‘লকডাউন’ ডাক দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। হামলা ও নাশকতার তীব্রতা বাড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ও দেশের বেশ কয়েকটি বড় শহরের স্কুল অনলাইনে ক্লাস নিতে বাধ্য হয়। পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন তৈরি হওয়ায় যাতায়াত কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার সারাদেশে কমপক্ষে ৩২টি ককটেল ও অপরিশোধিত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বহু বাসে। বৃহস্পতিবার রাতেও ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সংলগ্ন এলাকায় দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যদিও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরো রাজধানীতেই নিরাপত্তা জোরদার করেছে। মোতায়েন করা হয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) অতিরিক্ত ৪০০ সদস্য। শহরের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি জনসমাগমও কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতায় হাসিনার পৈতৃক জেলা গোপালগঞ্জের একটি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও রয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখা অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। বিস্ফোরণ ও নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে।
গত বছরের আগস্টে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। তার অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলছে। তিনি অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গত বছর নিরাপত্তা বাহিনী অভিযুক্ত করে বিতর্কিত সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে। জাতিসংঘের হিসাব, সেই আন্দোলন ও দমনপীড়নে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ছাত্র-জনতার মৃত্যু হতে পারে।
শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন। ছয় বছর আগে তিনি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার দীর্ঘ শাসনামলকে স্বৈরাচারী বলে সমালোচনা করে গ্রেপ্তার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো ঘটনার অভিযোগ তুলে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি ক্ষমতায় এসে ‘সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া’ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা পেয়েছেন। ৮৫ বছর বয়সী নোবেলজয়ী জানান, গত মাসে স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদকে কেন্দ্র করে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই গণভোট হবে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের দিনেই।
সরকার রাষ্ট্রীয় সহিংসতা থামানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিচারহীনতা এখনও ব্যাপক, যা নির্যাতন ও দমনমূলক কর্মকাণ্ড আরও বিস্তারের সুযোগ তৈরি করছে।