প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪:৪৩
পাকিস্তানের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সেনাবাহিনী। বলা যায় অনেকটা ক্ষমতাধর তারা। কারণ দেশটির রাজনীতি নির্ধারণে তাদের ভূমিকা বেশি বললে ভুল হবে না।
এবার সেই ক্ষমতায় যোগ হলো নতুন পালক। পাকিস্তানের পার্লামেন্ট গত বৃহস্পতিবার ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে। এর মধ্য দিয়ে আরও ক্ষমতাধর হলেন দেশটির সেনাপ্রধান।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে নতুন ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। একইসাথে তাকে গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তিও দেওয়া হয়েছে।
বেসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার এই ভারসাম্যকে হাইব্রিড শাসন হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। সংবিধানের নতুন সংশোধনীকে এখন সেই ভারসাম্য পরিবর্তন হয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে ঝুঁকে পড়া হিসেবে দেখছেন অনেকে।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, আমার কাছে, এই সংশোধনীটি সর্বশেষ ইঙ্গিত, সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। তার মতে, পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড সিস্টেম নয়, বরং একটি পোস্ট-হাইব্রিড সিস্টেমের অভিজ্ঞতা লাভ করছে।
সংবিধানের এই সর্বশেষ সংশোধনীর ফলে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মুনির এখন পাকিস্তানের নৌ ও বিমান বাহিনীরও তত্ত্বাবধান করবেন।
তার ফিল্ড মার্শাল পদবি ও পোশাক আজীবনের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অবসর গ্রহণের পরেও তাকে দায়িত্ব এবং কাজ প্রদান করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই সিদ্ধান্তের কারণে, তিনি আজীবন জনপরিসরে কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন।
বিলটির সমর্থকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সামরিক কমান্ড কাঠামোকে আরও স্পষ্ট করে।
পাকিস্তানের সরকার-পরিচালিত সংবাদ সংস্থা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফ পাকিস্তান, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। যা দেশটির একটি বৃহত্তর সংস্কার এজেন্ডার অংশ।
কিন্তু অন্যরা এটিকে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সহ-সভাপতি মুনিজা জাহাঙ্গীর বলছেন, সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই।
তিনি বলছেন, ক্ষমতার ভারসাম্যকে সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকিয়ে দেওয়া হলো এবং এমন এক সময়ে তাদেরকে আরও ক্ষমতায়িত করা হলো, যখন কিনা সেনাবাহিনীতে লাগাম টানার প্রয়োজন ছিল।