প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪০:০৮
চলতি মাসের শুরুতে মেক্সিকোর এক মেয়রকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে জেন-জি তরুণরা। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অপরাধ, দুর্নীতি আর আইনের শাসনের অভাবের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে হাজারো মানুষ। শনিবার (১৫ নভেম্বর) উত্তর আমেরিকার দেশটির অনেক শহরে ‘জেনারেশন জেড’ ব্যানারে হওয়া এই বিক্ষোভে মেক্সিকোজুড়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এদিন রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে অল্প কয়েকজন মুখ ঢাকা লোকের একটি দল প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউমের বাসভবন ন্যাশনাল প্যালেসের আশপাশের বেড়া ভেঙে ফেললে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে সেখানে কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রবীণ কর্মীরা ছাড়াও অংশ নেন মিচোয়াকান রাজ্যের নিহত মেয়র কার্লোস মানসোর সমর্থকেরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডে–অব–দ্য–ডেড উৎসবের এক জনসমাগমে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মেক্সিকো সিটির জননিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাসকেস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনাটিতে ১০০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আরও ২০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছেন বলে ভাসকেস স্থানীয় গণমাধ্যম মিলেনিওকে জানান। তিনি বলেন, ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে প্রশাসনিক অপরাধের কারণে আটক দেখানো হয়েছে।

মেক্সিকোর দৈনিক এল ইউনিভার্সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রাসাদের সীমানায় ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, পুলিশ কয়েক মিনিট ধরে জোকালো প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া করার পর এলাকা খালি করে দেয় এবং শেষ দলটিকেও ছত্রভঙ্গ করে।
বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘জেন-জি মেক্সিকো’ নামে একটি গোষ্ঠী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো তাদের ‘ঘোষণাপত্রে’ বলা হয়, তারা দলনিরপেক্ষ এবং সহিংসতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স এবং ধনকুবের রিকার্দো সালিনাস প্লিয়েগো বিক্ষোভের পক্ষে প্রকাশ্যে বার্তা দেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের অভিযোগ, ডানপন্থী দলগুলো জেন-জি আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বট ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।
চলতি বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশেও জেন-জিরা বৈষম্য, গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেপ্টেম্বরে নেপালে জেন–জি আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। মাদাগাস্কারেও একই মাসে বড় বিক্ষোভ হয়। পানির সংকট ও বিদ্যুতের স্থায়ী ঘাটতিতে ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন সরকারের বৃহত্তর ব্যর্থতা ও দুর্নীতি উন্মোচন করে দেয়। সপ্তাহজুড়ে অস্থিরতার পর সরকার ভেঙে যায়, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালান এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।