প্রকাশিত :
১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:০২:৪৭
লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে তিন বাংলাদেশীকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
অপহৃত প্রবাসীরা হলেন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের গুডুম্বা গ্রামের গোলাম রব্বানী, একই ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া দক্ষিণ মন্ডল পাড়া গ্রামের আব্দুল করিম ও একই উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা গ্রামের রুহুল আমিন। গোলাম রব্বানীকে পনের দিন আগে ও অন্য দুজনকে এক সপ্তাহ আগে অপহরণ করা হয়েছে। রুহুল আমিন ও আব্দুল করিম সর্ম্পকে শালা-ভগ্নিপতি।
নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও রেকর্ড পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। অপহরণকারী চক্রটি ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলেছেন। এতে দেশে থাকা পরিবারের সদস্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যেই দুটি পরিবার মুক্তিপণের কিছু টাকা পাঠিয়েছেন।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মোছা. জুথি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী গোলাম রব্বানী ২০১৫ সালে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। সেখাকানকার জিলথান শহরে থাকেন। গত ১৫ দিন আগে রঙের কাজের কথা বলে একটি মাফিয়া চক্র আমার স্বামীকে অপহরন করেন। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর আমার স্বামীর মুঠোফোন থেকে আমার মুঠোফোনে কল করে অপহরণের ঘটনা জানিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের ৩০ লাখ টাকা ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ঢাকার মতিঝিল কর্পোরেট শাখায় (হিসাব নম্বর 2761570326840, রাউটিং নম্বর- 090271399) জমা দিতে বলেন।’
এরপর তারা আমার স্বামীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে দেন। এখন তারা ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন। টাকা না দিলে আমার স্বামীকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছেন। আমি গত ৮ ডিসেম্বর আমার স্বামীকে উদ্ধারে প্রবাসী কল্যাণের ওয়েজ অর্নার বোর্ডের সহযোগীতা চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি বলে জানান তিনি।
জুথি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এত টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই। জানি না এখন আমার স্বামী কি অবস্থায় আছে।’
অপহৃত মো. আব্দুল করিম মন্ডলের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, ‘আমার স্বামী ১৩ বছর ধরে লিবিয়ায় রয়েছেন। ৬ ডিসেম্বর আমার স্বামী ও আরেক জনকে রঙের কাজ করানোর জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়। তারা সেখানে গিয়ে কাজের চুক্তি করেন। রঙ কেনার নাম করে তাদেরকে আটকে রেখে বাড়িতে কল দিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এরমধ্যে মুক্তিপণের কিছু টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।’
অপহৃত রুহুল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আটক হওয়ার আগে আমাকে কলে জানিয়েছিল সে কাজ দেখতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর লিবিয়ায় থাকা এক বড় ভাই আমাকে একটি গাড়ির ছবি তুলে পাঠায়। এ ঘটনার একদিন পর আমার স্বামীর মুঠোফোন থেকে আমাকে কল ও নির্যাতনের অডিও রেকর্ড পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এখন তারা সর্বশেষ ১২ লাখ টাকা দাবি করছেন। আমরা অনেকে কষ্টে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছি।’
আক্কেলপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই} গণেশ চন্দ্র বলেন, ‘লিবিয়ায় অপহৃত গোলাম রব্বানীর স্ত্রীর কাছে স্বামীর নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপনের দাবি করা হচ্ছে বলে তার স্ত্রী জুথি আক্তার থানায় এসেছিলেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি।’