প্রকাশিত :
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৩৩:০৭
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ কমান্ড্যান্ট বদলির মাত্র তিন দিনের মাথায় অন্তত ৪০ জন সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একাধিক সদস্যের মাত্র দুই থেকে তিন মাস আগেই বদলি হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে এসব বদলি করা হয়। তবে সমালোচনার মুখে পড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব বদলি আদেশ মৌখিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, বদলি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলামকে ৮ ডিসেম্বর পশ্চিমাঞ্চলে বদলি করা হয়। বদলির তিনদিনের মাথায় ১১ ডিসেম্বর হঠাৎ করে পূর্বাঞ্চলে কর্মরত অন্তত ৪০ জন আরএনবি সদস্যকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
বদলি আদেশের চারটি কপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কমান্ড্যান্ট মো. শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক আদেশে ৮ জন করে মোট ১৬ জন সদস্যকে বদলি করা হয়। এছাড়া সদরের কমান্ড্যান্ট মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত আরেক আদেশে ৭ জন করে ১৪ জন সদস্যকে বিভিন্ন শাখায় বদলি করা হয়। পৃথক আদেশে আরও প্রায় ১০ জনকে বদলি করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি বদলির ক্ষেত্রে সদস্যদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। বদলি আদেশ জারির পরই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ফলে সকালে জারি হওয়া সব বদলি আদেশ বিকেলেই মৌখিকভাবে স্থগিত করা হয়।
বদলি আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, একাধিক সদস্যকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। সিপাহি আবদুল্লাহ আল মাহফুজকে তিন মাস আগে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা শাখা থেকে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে বদলি করা হয়। এবার তাকে মাত্র ১০০ ফুট দূরের ট্রানজিট ইয়ার্ড (সিপিএ) শাখায় বদলি করা হয়েছে।
একইভাবে সিপাহি মো. আবু তাহেরকে তিন মাস আগে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা শাখা থেকে পাহাড়তলী কারখানায় বদলি করা হলেও এবার তাকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে আবার চট্টগ্রাম গোয়েন্দা শাখায় বদলি করা হয়। সিপাহি মামুন মিয়াকে ভৈরব বাজার স্টেশনে টিকিটসহ জনতার হাতে আটক হওয়ার ঘটনার তিন মাস আগে পাহাড়তলী কারখানায় বদলি করা হয়েছিল। এবার তাকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে বদলি করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলামের বাসায় ব্যক্তিগত কাজ করতেন, এমন কয়েকজন সদস্যকেও নামমাত্র দূরত্বে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সিপাহি মনির হোসেন ও কামরুজ্জামান উল্লেখযোগ্য একাধিক সদস্যকে দুই থেকে তিন মাসের ব্যবধানে একাধিকবার বদলি করা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত বলে মনে করছেন রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এসব বদলি অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে করা হয়েছে বলেই সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট মো. শহিদুল্লাহ জানান, বদলি আদেশগুলো মৌখিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমার জানা নেই।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সদরের কমান্ড্যান্ট মো. ওমর ফারুকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।