কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিজয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান নিষিদ্ধ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভাকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। এই ঘটনায় অনুষ্ঠানে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আগে একটি মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া—লও লও লও সালাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মঞ্চের একপাশ থেকে ইউএনও কাজী নাহিদ ইভা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
ইউএনওর এই নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তারা ইউএনওকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। এতে অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। পরিস্থিতির একপর্যায়ে ইউএনওর বদলির দাবিও তোলেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী।
উত্তেজনার কারণে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত থাকে। পরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর বাকি অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক রাজন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক হোসেনপুর পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসিম সবুজসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের আমরাই মাঠের ভেতরে আর মিছিল করতে নিষেধ করতে ছিলাম। তবু ইউএনও মহোদয় রেগে এসে এখানে কোনো দলীয় স্লোগান হবে না বলে স্লোগান বন্ধ করতে নিষেধ করেন। তার আচরণটা রূঢ় ছিল, যা আমরা একজন প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না। দলীয় লোকজন তো তখন এমনিতেই স্লোগান বন্ধ করে অনুষ্ঠান স্থলে বসে পড়ত। আমরাও তো অনুষ্ঠান উপভোগ করতে গিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি বড় আকার ধারণ করেছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল হক রাজন বলেন, ‘ইউএনওর আচরণ তাদের কাছে ভালো মনে হয়নি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে তিনি আর মন্তব্য করতে চাননি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহসী মাসনাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলীয় স্লোগান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি প্রশাসনকে হেয় করার শামিল। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলও হতে পারে।’
ইউএনও কাজী নাহিদ ইভার বক্তব্য জানতে তার সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।