আপডেট :
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:১৬:১১
খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার আল আকসা মসজিদ রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে বাড়িটির তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ছিলেন মোতালেব শিকদার।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রাতে সেখানে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা সেবন, মদ্যপানসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জেরে সহযোগীদের কেউ একজন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। এরপর থেকে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে তন্বীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, সকালে আমরা জানতে পারি এনসিপির একজন গাজী মেডিকেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে ঘটনাস্থল ও সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে এনসিপির ভিকটিমের প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। লাজফার্মা থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভুক্তভোগীসহ আরও দুইজন সেখানে আসে, ওই সূত্র ধরে মুক্তা হাউজে আসি। ওই কক্ষ থেকে মাদকের বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, তারা সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল ও নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের নাম জানা যাবে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। গুলিটি তার মাথার ভেতরে ঢোকেনি, চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত বলে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান।
মসজিদ স্মরণীর মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানান, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী এক মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন ও প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছি। তার আগেই এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কন্যা। তারা জানান, রোববার সন্ধ্যায় মোতালেবের সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। ও জানিয়েছিলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন, তার খোঁজ নিতে সেখানে আছেন।
পরে ডাকবাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কিনতে যাবেন বলে ফোন কেটে দেন। রাতে আর যোগাযোগ হয়নি। রাত ১১টার দিকে ফোন পেয়ে জানতে পারেন তাকে গুলি করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানান স্বজনেরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, গুলিটি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারে তার মাথা স্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মোতালেব মিয়া এখন শঙ্কামুক্ত।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ মোতালেব আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হন।