প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯:০৪
মাটির সেই উঠোন, খেজুর গাছের ছায়া, আর পুরোনো এক আঙিনা—সেখানেই থেমে গেল পঙ্কজ ত্রিপাঠীর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ডাক। শুক্রবার বিহারের গোপালগঞ্জে নিজের পৈতৃক বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অভিনেতার মা হেমবন্তীদেবী। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।
ত্রিপাঠী পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মা হেমবন্তীদেবী শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।’
মায়ের পাশে শেষ মুহূর্তে ছেলের উপস্থিতি
মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি জানতে পেরে কিছুদিন আগে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। আলো ঝলমলে মুম্বাই ছেড়ে সরল, নীরব সেই গ্রামে ফিরে আসা যেন ছিল এক সন্তান হিসেবে তার অন্তিম দায়িত্ব। মায়ের হাত ধরে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে ছিলেন অভিনেতা। চোখে জল, তবু মাথায় হাত রেখে ছিলেন সন্তানের মতো নয়—এক বন্ধুর মতো, এক আশ্রয়ের মতো।
শনিবার বেলসান্দেতে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, গ্রামের মানুষ আর কাছের বন্ধুরা ছিলেন সঙ্গে। এই কঠিন সময়ে ত্রিপাঠী পরিবার সবার কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
মা—পঙ্কজের জীবনের প্রথম পাঠশালা
হেমবন্তীদেবী ছিলেন না কোনো আলোচিত নাম। তিনি ছিলেন একজন গ্রাম্য নারী, কৃষক পরিবারের গৃহিণী। তবে তার স্নেহ আর সংগ্রামই তৈরি করেছে আজকের পঙ্কজ ত্রিপাঠীকে। বহু সাক্ষাৎকারে পঙ্কজ বলেছেন—‘যে মানুষটা আমাকে মাঠে-ঘাটে পরিশ্রমের গল্প শোনাতেন, মানুষকে সম্মান করতে শিখিয়েছেন, তিনি আমার মা।’
মাটির পথ ধরে হাঁটা থেকে মুম্বাইয়ের স্টুডিও সেট—সব পথেই মা ছিলেন তার অনুপ্রেরণা। সাফল্যের স্বাদ যতই বড় হয়েছে, কৃতজ্ঞতা ততবার ফিরেছে মায়ের দিকে।
হাসিমুখে থাকা মানুষটির জীবনে আজ নীরবতার ছায়া
‘মির্জাপুর’-এর নির্মম কালীন ভাইয়া কিংবা ‘গুনাহোঁ কা দেবতা’র শান্ত, সংবেদনশীল চরিত্র—সব অভিনয়ের আড়ালেও পঙ্কজ ত্রিপাঠী বাস্তবে খুবই নরম স্বভাবের একজন মানুষ। তার জীবনে মায়ের প্রস্থান যেন এক আশ্রয়ের পতন। যার কাছে ব্যর্থতা বলা যেত, সাফল্য ভাগ করা যেত, আজ সেই মানুষটিই আর নেই।
গ্রামের আকাশে আজও ভাসছে শোকের গন্ধ
বেলসান্দে গ্রামের ধুলোবালি, রাত্রির নিস্তব্ধতা আর নিভে যাওয়া চুলো—সবকিছুই আজ যেন থেমে আছে। বাড়ির উঠান জুড়ে শোক, আর দূরে ভেসে আসছে শ্মশানের ধোঁয়া। গ্রামের মানুষ বলছে—‘পঙ্কজভাইয়া যত বড়ই হোক, তার শিকড়টা এই গ্রামের মায়েই ছিল।’
মায়ের বিদায়ের এই সময়ে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর যন্ত্রণা হয়তো ভাষায় ধরা সম্ভব নয়। তবু একটাই কথা—মাটির সেই ঘর, সেই মানুষ, যে তাকে পৃথিবীর সামনে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, তাকে আজ বিদায় জানালেন তিনি মাথা নত করে।