আপডেট :
০১ জুন ২০২৫, ৩:৩৮:৩৭
আকাশে ধোঁয়া নয়, বরং আমাদের নিত্যকার জীবনযাত্রার বহু অব্যক্ত উৎস থেকেই ছড়াচ্ছে বিপজ্জনক মাত্রার কার্বন। গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঢাকার আকাশে বিষ, নিঃশ্বাসেই রোগ!
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আইকিউএয়ার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের (DoE) মতে, রাজধানীর বাতাসে PM2.5 এবং CO₂ নিঃসরণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ এই দূষণের অনেক উৎস আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে।
অজানা ৫টি উৎস, যেগুলো প্রতিদিন বিষ ছাড়ছে বাতাসে:
ইটভাটা (Brick Kilns): দেশজুড়ে অনুমোদনবিহীন প্রায় ৬,৫০০ ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই এখনো কয়লা ও জ্বালানির অপরিশোধিত ফর্ম ব্যবহার করে। প্রতিটি ভাটা বছরে প্রায় ১,০০০ টন CO₂ নিঃসরণ করে।
নগর বর্জ্য পোড়ানো: খোলা আকাশে পলিথিন, প্লাস্টিক ও বর্জ্য পোড়ানোর প্রবণতা শহর ও গ্রাম উভয়েই ব্যাপক। এতে কার্বনের পাশাপাশি ডাই-অক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস নিঃসৃত হয়।
পরিবহন খাতের অপ্রতুল নিয়ন্ত্রণ: ঢাকায় রেজিস্টারকৃত ৮০% যানবাহন ১০ বছরের বেশি পুরনো। ডিজেলচালিত বাস, লেগুনা এবং নন-মেইনটেইনড গাড়ি থেকে অতিরিক্ত CO ও CO₂ গ্যাস নির্গত হয়।
জৈব চুল্লি ও রান্নার পদ্ধতি: এখনো দেশের গ্রামে ও শহরের উপশহরে হাজার হাজার পরিবার কাঠ ও কয়লা দিয়ে রান্না করে। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ও ধোঁয়া ছড়ায়।
বন উজাড় ও জমির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার: বনভূমি হ্রাস পেলে কার্বন ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে অতিরিক্ত কার্বন বাতাসে জমা হয়।
পরিবেশ গবেষক ড. তাহমিনা ফারজানা বলেন, “বায়ুদূষণের বড় কারণ শুধু যানবাহন নয় আমাদের নির্মাণ খাত, রান্নার পদ্ধতি ও নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ভয়ানক ভূমিকা রাখছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কার্বন কমবে না।” আপনার এলাকায় কি বর্জ্য খোলা আকাশে পোড়ানো হয়? আপনি কি জানেন এতে আপনার শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ: বাস্তবতা বনাম পরিকল্পনা
নীতিগত অগ্রগতি: বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে কিছু প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
বাস্তবায়নের ঘাটতি: ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু ইটভাটা বন্ধ করা হলেও পুরাতন যানবাহন, বর্জ্য পোড়ানো ও ঘরোয়া দূষণ কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন।
ঢাকার জন্য এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ঘোষিত হলেও তার প্রয়োগ নেই মাঠে।
কী করা যায়? সমাধানের দিকনির্দেশনা
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা
ইটভাটায় জিগজ্যাগ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত
জৈব বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ ও রিসাইক্লিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ
পুরনো যানবাহনের পরিবর্তে ইলেকট্রিক পরিবহনকে উৎসাহ দেওয়া
রান্নার জন্য ক্লিন কুকিং টেকনোলজি প্রচলন