প্রকাশিত :
১০ জুলাই ২০২৫, ৮:৪০:৫৭
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই চলছে টানা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি যেমন তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তেমনই সৃষ্টি করেছে নানামুখী দুর্ভোগ। বিশেষ করে নগর এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে চিরচেনা জলাবদ্ধতা, সড়কে যানজট এবং জনজীবনে চরম ভোগান্তি।
স্বস্তির দিক:
চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের অনেক জায়গায় জুন-জুলাইয়ের প্রচণ্ড দাবদাহের পর হঠাৎ এই মৌসুমি বৃষ্টিতে কিছুটা শীতলতা ফিরে এসেছে। কৃষকদের জন্যও এই বৃষ্টি অনেকাংশে আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। আমন মৌসুমের বীজতলা তৈরি, রোপণ কাজ, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছ ধরার সুবিধা—এসব দিক থেকে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কৃষিবিদ সোহেল মাহমুদ বলেন:
এই সময়ে বৃষ্টিটা খুব দরকার ছিল। অনেক জায়গায় খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছিল। এখন ফসল বাঁচবে, মাটি প্রস্তুত হবে। তবে টানা বৃষ্টি হলে ফসল নষ্টের আশঙ্কাও থেকে যায়।
দুর্ভোগের দিক:
অন্যদিকে শহরাঞ্চলে এই ধারাবাহিক বৃষ্টি মানেই দুর্যোগের পূর্বাভাস। রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গেছে। বিশেষ করে মিরপুর, বাড্ডা, মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁওসহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছে অনেক জায়গায়। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগে।
রাজধানীর এক বাসিন্দা, রুবিনা আক্তার বলেন:
সকাল থেকে পানি বাসার নিচে। বাচ্চাদের স্কুলেও পাঠাতে পারি নাই। রাস্তায় রিকশা নাই, গাড়ি নাই ঘরবন্দি হয়ে আছি।
গণপরিবহন সংকট ও যানজট:
বৃষ্টিতে গণপরিবহন সংকট চরমে উঠেছে। গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় সড়কে যানজটও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে বেশ কিছু জায়গা থেকে।
জরুরি বিভাগগুলোতেও প্রভাব:
বৃষ্টির কারণে জরুরি সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে প্রবেশপথ জলমগ্ন হয়ে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি বেড়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস:
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী তিন-চার দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে। ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা এবং নদীবাঁধ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সতর্কতাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই ধারাবাহিক বৃষ্টি যেমন প্রকৃতিকে সজীব করেছে, তেমনই চিহ্নিত করেছে নগর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে। স্বস্তির পাশাপাশি দুর্ভোগের চিত্র এড়ানো যাচ্ছে না। শহরগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া প্রতি বর্ষায় এই দৃশ্য আরও তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা থেকেই যায়।