নতুন গবেষণা
প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১:৪২:১৭
হার্ট অ্যাটাকের পর ভিটামিন–ডি৩ সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমাতে পারে। নতুন গবেষণায় এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটির ইন্টারমাউন্টেন হেলথ-এর বিশেষজ্ঞদের পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বড় আকারের এই র্যান্ডমাইজড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে ভিটামিন–ডি-এর ঘাটতি নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ভিটামিন-ডি৩ সাপ্লিমেন্টের ডোজ ঠিক করলে দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘টার্গেট-টু-ট্রিট’ কৌশল, যেখানে রোগীর ভিটামিন–ডি স্তর ঠিক রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।
গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে অনুষ্ঠিত ২০২৫ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক সেশনে উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণার প্রধান গবেষক ও কার্ডিওভাসকুলার এপিডেমিওলজিস্ট ড. হেইডি মে বলেন, ‘রোগীদের উচ্চমাত্রার ভিটামিন–ডি৩ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হলেও কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা অত্যন্ত উৎসাহজনক।’
তবে তিনি আরও বলেন, ফলাফল যাচাই করতে ভবিষ্যতে আরও বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের শরীরে ভিটামিন–ডি’র ঘাটতি রয়েছে।
এর কারণগুলো হলো—
• ঘরে বেশি সময় থাকা
• রোদ এড়িয়ে চলা
• ত্বক সুরক্ষার পরামর্শের অভাব
• শহুরে জীবনযাপন
আগে প্রাকৃতিকভাবে রোদে থাকার কারণে শরীর নিজে থেকেই যথেষ্ট ভিটামিন–ডি উৎপন্ন করত। এখন অনেকেই বিকল্প উপায়ে-বিশেষত ভিটামিন–ডি৩ সাপ্লিমেন্টের ওপর নির্ভর করছেন। পূর্বের অনেক গবেষণায় একটি নির্দিষ্ট ডোজ সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু রক্তে ভিটামিন–ডি কতটুকু বাড়ছে, তা নিয়মিত পরিমাপ করা হয়নি।
গবেষণাটিতে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুনভাবে চিকিৎসা কৌশল প্রয়োগ করা হয়। এতে রোগীর রক্তে ভিটামিন–ডি’র মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে ঘাটতি চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী সাপ্লিমেন্টের ডোজ সমন্বয় করা হয়।
এ ছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো পর্যন্ত রোগীদের অবস্থাকে ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ফলে সাপ্লিমেন্ট প্রয়োগ পুরোপুরি ছিল পরিমাপ–নির্ভর ও রোগী–ভিত্তিক, যা গবেষণার কার্যকারিতায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এই পদ্ধতির মাধ্যমেই কার্যকর ফল পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
ড. মে বলেন, ‘আগে শুধু সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হতো, কিন্তু রক্তের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হতো না। মনিটরিং-ভিত্তিক চিকিৎসা দিয়েই ঝুঁকিহ্রাস সম্ভব হয়েছে।’
ইন্টারমাউন্টেন হেলথ পরিচালিত ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলা ‘টার্গেট–ডি ট্রায়াল’ শীর্ষক এ গবেষণায় অংশ নেন মোট ৬৩০ জন রোগী। সবাইকে হার্ট অ্যাটাকের এক মাসের মধ্যে ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণার অগ্রগতি ও রোগীদের হার্টের অবস্থা ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে অনুসরণ করা হয়।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল—রক্তে ভিটামিন–ডি’র আদর্শ মাত্রা বজায় রেখে পুনরায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি কতটা কমানো সম্ভব, তা নির্ণয় করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণাটি ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক–পরবর্তী চিকিৎসায় নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে। বিশেষত যেসব রোগীর ভিটামিন–ডি ঘাটতি দীর্ঘদিন থাকে, তাদের জন্য এই কৌশল হতে পারে জীবনরক্ষাকারী সমাধান।
সোর্স: সাইটেক ডেইলি