বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন
প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৬:০১:২৬
এখন থেকে হলুদ রঙের টমেটোর দেখা মিলবে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, চীনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, কীভাবে লাল রঙের বাইরেও কীভাবে টমেটো রং হলুদ হবে। টমেটোর রং পরিবর্তনের এ রহস্য উদঘাটনে চীনের সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন দিক সামনে এনেছেন।
হর্টিকালচার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াইএফটি৩ জিনে একক মিউটেশন প্রক্রিয়া টমেটোর স্বাভাবিক রং তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে টমেটোর রং হলুদ করে তোলে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ওয়াইএফটি৩ জিনে পাওয়া এই পরিবর্তন আইসোপেনটেনাইল ডাইফসফেট আইসোমেরেজ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের কার্যকারিতা দুর্বল করে দেয়। এনজাইমটি ক্যারোটিনয়েড তৈরির কাঁচামাল আইপিপি এবং ডিএমএপিপি-এর ভারসাম্য রক্ষা করে, যা টমেটোর রং নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়াইএফটি৩ জিনে মাত্র একটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন (এ→সি রূপান্তর) টমেটোর স্বাভাবিক রং তৈরির প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটায়। এই পরিবর্তনে প্রোটিনের ১২৬ নম্বর অবস্থানে সেরিনের জায়গায় আর্জিনিন যুক্ত হয়, যা এনজাইমের গঠনকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
গবেষকরা জানায়, এই একটিমাত্র অ্যামিনো অ্যাসিডের অদলবদলেই—এনজাইমের সক্রিয় কেন্দ্র দুর্বল হয়ে পড়ে, যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এমজি২⁺ কো-ফ্যাক্টর সঠিকভাবে যুক্ত হতে পারে না। ফলে আইপিপি থেকে ডিএমএপিপি–তে রূপান্তর ব্যাহত হয় এবং তার সরাসরি প্রভাবে টমেটোর লাইকোপিন ও মোট কারোটিনয়েড মাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। এর পরিণতিতে, লাল রং তৈরির স্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ে এবং টমেটো ফল পায় হলুদ বর্ণ।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই উদ্ভাবন টমেটোর রং ও পুষ্টিগুণ নিয়ন্ত্রণে জিনভিত্তিক গবেষণায় নতুন দিশা দেখাবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, হলুদ-ফলযুক্ত টমেটো ভ্যারিয়েন্টে–এ পাওয়া যায় ওয়াইএফটি৩ জিনের বিকল বা দুর্বল সংস্করণ। আশ্চর্যের বিষয়, জিনগত ত্রুটির কারণে প্রোটিনের মোট পরিমাণ বা প্লাস্টিডে পৌঁছানোর সক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকলেও, এনজাইমটির কার্যক্ষমতা ছিল মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া।
পরীক্ষার ফলাফলে স্পষ্টত
সঠিক বা কার্যকর ওয়াইএফটি৩ জিন যুক্ত করলে টমেটো আবার স্বাভাবিক লাল রং ফিরে পায়, অন্যদিকে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনটি নিষ্ক্রিয় করলে ফল হয়ে ওঠে হলুদ। এই ফলাফলে নিশ্চিত হওয়া যায়, টমেটোর রং নিয়ন্ত্রণে ওয়াইএফটি৩ জিনই অন্যতম প্রধান নিয়ামক, যা ক্যারোটিনয়েড-বিশেষত লাইকোপিন সঞ্চয়ে সরাসরি ভূমিকা রাখে।
গবেষণা দল আরও জানায়, ওয়াইএফটি৩ এবং ওয়াইএফটি৩—কেও (YFT3–KO) লাইনে ক্রোমোপ্লাস্টের গঠন স্বাভাবিক থাকে না। ফলে ফলের ভরাট রং ও পুষ্টিগুণ বাড়ানোর যে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থাকে, সেটিও ব্যাহত হয়।
এ ছাড়া ক্যারোটিনয়েড উৎপাদনের সাথে যুক্ত একাধিক জিনের ( যেমন—DXS, HDR, PSY1, CRTISO ইত্যাদি) প্রকাশমাত্রা বেড়ে গেলেও এনজাইমের ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
গবেষক লিংজিয়া ঝাও বলেন, ‘একটি অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তন কীভাবে টমেটোর রংসহ সামগ্রিক গুণগত বৈশিষ্ট্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে—এই গবেষণা তা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে কারোটিনয়েড–সমৃদ্ধ ফল উৎপাদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াইএফটি৩ জিন নিয়ন্ত্রণের এই তথ্য—উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন টমেটো উদ্ভাবন, বাজার–বান্ধব ফলের রং উন্নয়ন এবং ভিটামিন–এ সমৃদ্ধ ফসল তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। অন্যান্য ক্যারোটিনয়েড–সমৃদ্ধ ফসলেও গবেষণাটি নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
সূত্র: সাইটেক ডেইলি