‘জনতার মঞ্চ’ থেকে ‘মঞ্চ ৭১’: সরকারি আমলাদের রাজনৈতিক পুনঃসংগঠন ও গ্রেপ্তার অভিযান
প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭:৫৫
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ ব্যানারে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সচিবালয়সহ সারা দেশে কর্মরত আওয়ামীপন্থি কয়েকশ সরকারি আমলা আন্দোলনে সরাসরি সমর্থন দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, সেই ‘জনতার মঞ্চের’ ফর্মুলা আবারও কাজে লাগাতে মাঠে নামতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য নতুন করে ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে। এ সংগঠনে দেড় শতাধিক সাবেক ও বর্তমান আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংগঠনটির গোলটেবিল আলোচনা ভণ্ডুল হয়। উপস্থিত কয়েকজন আলোচককে মব সৃষ্টি করে পুলিশে সোপর্দও করা হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘জনতার মঞ্চ’-এ অংশ নেওয়া সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের নামে করা ফৌজদারি মামলাগুলো আবারও চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংয়ে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০৯ জনের একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, ভূঁইয়া মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে আছেন।
গোয়েন্দা সূত্র দাবি করছে, জনতার মঞ্চের সেই কুশীলবরা ফের সক্রিয় হয়ে নতুন নামে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। ‘মঞ্চ ৭১’-এর আড়ালে তারা পুরোনো কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “সরকারি চাকরিজীবীদের ‘জনতার মঞ্চ’-এ যাওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। নতুন কোনো মঞ্চেও যাওয়া উচিত নয়। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। রাজনৈতিক মঞ্চে যোগদান সরকারদ্রোহী কর্মকাণ্ড।”
২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করলেও এবার ফের সেটি চালু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ও ভূঁইয়া মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৮ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’-এর আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকীকেও মবের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং পরে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখায়।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।
জনপ্রশাসন বিশ্লেষক ও সাবেক আমলা মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, “জনতার মঞ্চ বাংলাদেশের প্রশাসনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। প্রজাতন্ত্রের চাকরিজীবী হয়েও সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। এর প্রভাবে পরবর্তী সময়ে প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব প্রবল হয়েছে। এটি বড় ধরনের অপরাধ, যার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া কঠিন।”