আপডেট :
০১ জুলাই ২০২৫, ৮:৫৯:২৮
২০২৪ সালের জুলাই মাসটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী সময়কাল। মাত্র ৩১ দিনের মাসটি যেন সময়ের স্রোতে আটকে গিয়েছিল—বর্ণনা করা যায় ‘৩৬ দিনের জুলাই’ হিসেবে। দেশের রাজনীতিতে এমন উত্তেজনা, গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক হুড়োহুড়ির এক যুগান্তকারী অধ্যায় এই মাসেই ফুটে ওঠে।
রাজনৈতিক উত্তেজনার শুরু
জুলাইয়ের প্রথম দিকে শুরু হয় বিরোধী দল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থান ও গণআন্দোলনের ডাক। তারা অভিযোগ তোলে সরকারের স্বৈরাচারী নীতি, বিচারহীনতা এবং মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ নিয়ে। সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়।
অবস্থান ও পদযাত্রা
৩৬ দিনের মধ্যে অন্তত ৬৪ জেলার প্রায় সবখানে অনুষ্ঠিত হয় গণঅভ্যুত্থান পদযাত্রা, সমাবেশ ও মানববন্ধন। পদযাত্রা চলাকালীন সরকারি ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা দেশে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করে। রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল মঞ্চ সমাবেশ, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। এতে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল উদ্দীপনা দেখা যায়।
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঢেউ
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘৩৬ দিনের জুলাই’ ব্যাপক আলোচনার বিষয় ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ সময় দেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠেন। অনেকে এই সময়কালকে ‘গণতন্ত্রের জন্য নতুন সূচনা’ হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ ‘অস্থিরতার কালপর্ব’ বলেও অভিহিত করেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সমাধানের চেষ্টা
সরকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গণঅভ্যুত্থান ও কর্মসূচি ‘দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে’। তবে তারা একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বলেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সক্রিয় হয়, এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। কিন্তু অগ্রগতি সীমিত থাকায় উত্তেজনা কিছুটা অব্যাহত ছিল।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
৩৬ দিনের কর্মসূচির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হয়, বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ধীরগতি আসে। পরিবহন ও উৎপাদন খাতে অচলাবস্থা তৈরি হয়, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তন চাওয়া জনগণের উন্মুখতা বৃদ্ধি পায়।
স্মৃতি ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা
‘৩৬ দিনের জুলাই’ বাংলাদেশের আধুনিক রাজনীতিতে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। এর পাঠ হলো—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন এবং সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপই শান্তিপূর্ণ সমাধানের মূল চাবিকাঠি। দেশবাসী আশা করে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আরও পরিণত হবে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।