প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ৬:০৪:৪৭
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানের প্রধান সুপেয় পানির উৎস আমির কবির বাঁধে মজুতকৃত পানি শুকিয়ে যাবে। ফলে বাসিন্দাদের মধ্যে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেবে। ইতোমধ্যেই তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী। দীর্ঘমেয়াদি খরা ও টানা অনাবৃষ্টির কারণে সেখানে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। জলাধারটিতে এখন মাত্র ১৪ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি মজুত রয়েছে, যা মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।
রোববার (২ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএকে এসব জানান তেহরান আঞ্চলিক পানি কোম্পানির প্রধান বেহজাদ পারসা।
তিনি বলেন, আমির কবির বাঁধে এখন মাত্র ১৪ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণক্ষমতা রয়েছে, যা মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ। গত বছর একই সময় ছিল ৮৬ মিলিয়ন ঘনমিটার। তেহরানের বাঁধগুলোতে পানি প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমেছে। মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় প্রায় শতভাগ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। অর্থাৎ বৃষ্টিপাত শূন্যের কোঠায় নেমেছে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের পানি ব্যবহারে সতর্কতা ও সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়ে বেহজাদ পারসা বলেন, ‘জরুরিভিত্তিতে পানি সঞ্চয় ও ব্যবহারের অভ্যাসে পরিবর্তন না এলে লাখ লাখ মানুষের নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ হুমকির মুখে পড়তে পারে।’
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দিতে খুব একটা দেখা যায়নি। এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।
বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে। তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।
ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে। পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে। জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।
ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।
ইরানের পানি সংকট শুধু তেহরানেই সীমিত নয়। দেশের মধ্যাঞ্চলের ঐতিহাসিক নগর ইস্ফাহান আরও কঠিন অবস্থায় পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শহরটিতে পানীয় জল একেবারে শেষ হয়ে যেতে পারে। একসময় জায়ানদেহরুদ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই শহর এখন শুধু বাঁধ, টানা খরা, অব্যবস্থাপনা এবং বছরের পর বছর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ সংকটে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’
পুরো পরিস্থিতি ইরানের একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা প্রতিফলিত করছে। দেশে বৃষ্টিপাত মৌসুমি গড়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম, এবং ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ এখন ধারণক্ষমতার ২০ শতাংশেরর নিচে নেমে এসেছে। ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, ইরান ইন্টারন্যাশনাল