একই সবজি দিনে তিন দামে! পাইকারি, আড়ত আর খুচরায় কেন এত পার্থক্য?
প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২৫, ১১:৩১:০৪
একই সবজি দিনে তিন দামে! পাইকারি, আড়ত আর খুচরায় কেন এত পার্থক্য? দায় কার কৃষক, আড়তদার না প্রশাসন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা শুধু বাজার নয়, এটি নিয়ন্ত্রণহীন ‘মুনাফার খেলা’। "সবজি আসছে কৃষকের মাঠ থেকে, কিন্তু দামে আগুন লাগে শহরের হাঁড়িতে!" ড. শফিকুল ইসলাম, কৃষি অর্থনীতিবিদ
পেঁপে, লাউ বা বেগুন যেকোনো একটি সবজির দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, সবজি বাজার যেন এক রহস্যময় গোলকধাঁধা। সকালে বাজারে এক দাম, দুপুরে আরেক, বিকেলে আবার বেড়ে যায় দ্বিগুণ। অথচ কৃষকের মুখে শোনা যায় ভিন্ন সুর “ভাই, লাভ ত তো করি না, উল্টা দামই পাই না ঠিকমতো!”
ঢাকার শ্যামবাজারে সকালে প্রতি কেজি বেগুনের পাইকারি দাম ছিল ২৫ টাকা, অথচ সেই বেগুন খুচরা বাজারে উঠেছে ৭০ টাকায়! এই ফারাকের পেছনে কারা আছে? আড়তদারদের সিন্ডিকেট না কি প্রশাসনের নজরদারির অভাব?
"কৃষক কমে যাচ্ছে, দালাল বাড়ছে এই বাজারে হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।" ড. শফিকুল ইসলাম
রাজশাহীর কৃষক রবিউল বলেন, “আমরা মাঠে ঘাম ঝরিয়ে সবজি ফলাই, পাইকার এসে ১০-১৫ টাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু শহরে দেখি সেই সবজি বিক্রি হয় চার গুণ দামে!” এমন অসামঞ্জস্যতা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশেই এই সমস্যা প্রকট। ভারতের মহারাষ্ট্রেও কৃষকরা বহুবার এই ‘দাম কারচুপি’ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ড. শফিকুল ইসলাম বলছেন, “বাংলাদেশে কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ন্যায্য দাম পৌঁছাতে চেইনটা দুর্বল। এই দুর্বলতাই সিন্ডিকেটকে জায়গা করে দেয়।” তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি রয়েছে, কিন্তু সেটা স্থায়ী ও ডিজিটাল না হওয়ায় প্রতিদিনই নতুন গেম খেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বাজারে ন্যায্য দাম নির্ধারণের জন্য নেই কোনো ‘রিয়েল টাইম ডাটা’। ফলে একেক জায়গায় একেক রকম দাম এমনকি পাশের বাজারেও পার্থক্য বিস্ময়কর! বিশ্বের অনেক দেশে এখন ‘Farmer’s Market’ ও ‘ডিজিটাল মূল্য নির্ধারণ বোর্ড’ চালু রয়েছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ ইন্দোনেশিয়াতেও কৃষিপণ্যের দামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। বাংলাদেশে যদি এই প্রযুক্তি, সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও পরিবহন প্রণোদনা নিশ্চিত করা না যায়, তবে বাজারের এই ‘গেম’ চলতেই থাকবে আর ঠকতে থাকবে সাধারণ মানুষ।
সবজি বাজারের দাম নির্ধারণ এখন আর শুধু উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না এটি একপ্রকার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চাতুরির খেলা। কৃষক ও ভোক্তা, উভয়েই ঠকছে এই খেলায়। সময় এসেছে প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনার, যেখানে নেই কোনো গোপন চুক্তি, নেই মুনাফার মারপ্যাঁচ আছে কেবল ন্যায্যতার গন্ধ।