সন্ত্রাসের ছায়া, নিঃশব্দ কান্না আর গুলির শব্দ সবকিছুর মাঝেও
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৩:০৫:১৯
সন্ত্রাসের ছায়া, নিঃশব্দ কান্না আর গুলির শব্দ সবকিছুর মাঝেও দেয়ালে আঁকা এক একটি শিল্প যেন প্রতিবাদের চিৎকার। প্যারিসের রাস্তায় জন্ম নিচ্ছে এক ভিন্নধারার বিপ্লব রঙের ছোঁয়ায়। “যে দেয়াল একদিন রক্তে ভিজেছিল, আজ সেখানে লেখা হচ্ছে ভালোবাসা ও প্রতিরোধের গল্প।” জ্যাঁ মার্সেল, ফরাসি শিল্প সমালোচক ও আর্ট হিস্টোরিয়ান
প্যারিস মানেই কি শুধু আইফেল টাওয়ার, লুভর মিউজিয়াম আর রোমান্টিক নদীর শহর? একসময় হয়তো তাই ছিল, কিন্তু বিগত এক দশকে শহরটি হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের এক নতুন প্রতীক। বিশেষ করে ২০১৫ সালের 'শার্লি হেবদো' হামলা কিংবা বাতাক্লঁ কনসার্ট হামলার পর, প্যারিস কাঁদলেও থেমে থাকেনি। সেই কান্না এখন রূপ নিচ্ছে দেয়ালচিত্রে, শিল্পে, রঙে। প্যারিসের ১১তম অ্যারোন্ডিসমেন্ট এলাকা, যেখানে এক সময় গুলির শব্দে কেঁপেছিল শহর, এখন সেজেছে স্ট্রিট আর্টে। দেয়ালে ফুটে উঠেছে একেকটি ছবি কোনোটা এক শিশুর মুখ, যার চোখে ভয়, আবার কোথাও হাতে তুলি ধরা এক কিশোর, যার চোখে স্বপ্ন।
শিল্পে প্রতিবাদ, রঙে প্রতিরোধ
এই দেয়ালচিত্রগুলো শুধু শিল্প নয়, এ যেন নীরব প্রতিবাদের ভাষা। শিল্পী মিরেল পেরো বলেন, “আমরা জানি না, আগামীকাল কে বাঁচবে। কিন্তু আজ যদি রঙে আঁকি, তবে অন্তত ইতিহাস জানবে আমরা চুপ ছিলাম না।” আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বিশ্বজুড়ে শিল্পীরা। ভারত, ব্রাজিল, জাপান, এমনকি বাংলাদেশের তরুণরাও এঁকেছেন প্যারিসের দেয়ালে।
বিশ্বমঞ্চে প্রতিধ্বনি
- প্যারিসের এই শিল্পপ্রতিবাদ এখন জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক উৎসবে।
- লন্ডনের টেট মডার্ন ও নিউ ইয়র্কের এমওএমএ-তে চলছে এই স্ট্রিট আর্টের প্রদর্শনী।
- বাংলাদেশেও ঢাকার ‘আর্ট ফেস্ট’ এ প্রদর্শিত হয়েছে কিছু ফরাসি শিল্পীর কাজ, যেখানে ফুটে উঠেছে “Art Against Fear” ধারণা।
বিশেষজ্ঞ মত:
ড. ফারহানা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “প্যারিস আজ শুধু পশ্চিমা শহর নয়, এটা হয়ে উঠেছে বিশ্বচেতনার ক্যানভাস। সেখানে আঁকা প্রতিটি ছবি এক একটি কবিতা, এক একটি আর্তনাদ।”
শেষ কথায়:
যখন বুলেট থেমে যায়, তখন রঙই বলে সবচেয়ে শক্তিশালী কথা।
প্যারিস কাঁদে, কিন্তু দেয়াল বলে ওঠে “ভয় নয়, আমরা এখনও রঙে বাঁচি।”
এই শহর রক্তে ভিজলেও দেয়ালচিত্রে সে নিজেকে রাঙায় এক অনন্য সাহসে।
প্যারিস আজ আর শুধু ভালোবাসার শহর নয়, সে আজ প্রতিবাদেরও রাজধানী।