বাক্যের গাঁথুনিতে ছকভাঙা সাহস, চরিত্রে জীবনের দ্বন্দ্ব নতুন লেখকে
প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ৩:১৯:০৮
বাক্যের গাঁথুনিতে ছকভাঙা সাহস, চরিত্রে জীবনের দ্বন্দ্ব নতুন লেখকের কলমে বদলে যাচ্ছে বাংলাসাহিত্যের মানচিত্র। পাঠক কি তৈরি এই সাহিত্য-ঝড় সামলাতে? “গল্পকাররা এখন আর গল্প বলেন না, তারা ভাষার গায়ে আগুন ধরান।” তাহমিদ সাকিব, সাহিত্য সমালোচক ও গবেষক
বাংলা সাহিত্য যেন সময়ের আয়নায় আবার নতুন করে রূপ নিচ্ছে। পুরোনো আঙ্গিকের গল্প, চেনা ভাষার গণ্ডি সবই যেন এখন প্রশ্নের মুখে। একঝাঁক নবীন গল্পকার তাঁদের লেখায় আনছেন ভাঙচুর, আবার গড়ছেনও নতুন এক সাহিত্যদুনিয়া। ভাষায় বুনো স্বাদ, চিন্তায় রাজনৈতিক ঝাঁজ এই নতুন ধারায় পাঠক যেমন অবাক, তেমনি মুগ্ধও। নতুন প্রজন্মের এই গল্পকাররা বইমেলা কিংবা সাহিত্যপত্রিকায় সীমাবদ্ধ নন। তাদের লেখা এখন পাওয়া যায় ব্লগ, ডিজিটাল ম্যাগাজিন, এমনকি পডকাস্টেও। তানিয়া মেহজাবিন, যিনি ‘গল্পে নারীর গাঢ় প্রতিরোধ’ নিয়ে আলোচিত, বলেন, "আমাদের সময়ের ভাষা আলাদা, অভিজ্ঞতাও আলাদা। সুতরাং গল্প বলার ধরনও বদলাবে এটাই তো স্বাভাবিক।"
আঙ্গিক ও ভাষায় ভাঙনের ছাপ
ক্লাসিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই লিখছেন 'ফ্ল্যাশ ফিকশন', 'মাইক্রো-ফিকশন', এমনকি হাইব্রিড ধারার সাহিত্য। মারুফ ইমতিয়াজ, একজন তরুণ গল্পকার, তার ‘নৈঃশব্দের চুম্বন’ গল্পে মাত্র ৩৫২ শব্দে তুলে ধরেছেন যুদ্ধপরবর্তী এক নারীর মানসিক ট্রমা যা একসময়কার সাহিত্যে অনুপস্থিতই ছিল। বিশ্বসাহিত্যের দিক থেকেও এ প্রবণতা নতুন নয়। মার্কিন লেখক লিডিয়া ডেভিস বা জাপানের হরুকি মুরাকামি–এর প্রভাব বাংলার নতুন লেখকদের ভাষায় অনুরণিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কেয়া নাসরিন বলেন, "এই প্রজন্ম সাহিত্যে সাহস নিয়ে এসেছে। তারা ভাষাকে কেবল মাধ্যম না, বরং প্রতিবাদ ও আত্মপ্রকাশের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।"
শেষ কথা:
সাহিত্যের ট্রেন বদলাচ্ছে রেললাইন। পুরোনো পাঠক হয়তো কিছুটা হতবাক, কিন্তু নতুনেরা বলছেন,
“আমরা গল্প বলি না, গল্প হয়ে বাঁচি।” আঙ্গিকে বিদ্রোহ আর ভাষায় বিপ্লব—বাংলা সাহিত্য যে এক নতুন বাঁকে, তা আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।বাংলা গল্প আর চুপ করে থাকবে না, এখন সে হাঁটে নিজস্ব পদচিহ্নে।