আপডেট :
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১:০১:২১
রাঙামাটির জুরাছড়িতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভুবনজয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ছয়তলা ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম, নিম্নমানের কাজ এবং বিধিবহির্ভূত কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, ভবনটির নির্মাণকাজ পায় এনআইএসআই নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিগত সরকারের সময়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মো. সেলিম উল্লাহ প্রতিষ্ঠানটির হয়ে কাজটি শুরু করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ করে সাইট ছাড়ে এবং আর ফিরে আসেনি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যাওয়ার পর প্রকল্পটি নতুন করে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। বরং সরকারি ক্রয়বিধির নিয়ম অমান্য করে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা নিজেরাই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা হলেন— নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা, সহকারী প্রকৌশলী আলো জ্যোতি চাকমা এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চাকমা।
মাঠপর্যায়ে দেখা যায়, ব্যবহৃত বালু, ইট, রড ও সিমেন্ট সবকিছুতেই নিম্নমানের ছাপ স্পষ্ট। ছাদের ঢালাইয়ে ভাইব্রেশন মেশিন ব্যবহার না করায় একাধিক স্থানে রড বেরিয়ে আছে এবং ফাটল ধরেছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে নয়—সরাসরি প্রকৌশলীদের নির্দেশে কাজ করছেন।
সহকারী প্রকৌশলী সুমন চাকমা দাবি করেন ঠিকাদার ছাড়াই কাজ চালানোর অভিযোগ সত্য নয়। তবে শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য তার দাবি উল্টো প্রমাণ করে।
সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী—
* ঠিকাদার কাজ ফেলে গেলে প্রথমে তাকে নোটিশ দিতে হয়,
* চুক্তি বাতিল ও পারফরম্যান্স গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করতে হয়,
* এরপর নতুন দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমেই বাকি কাজ সম্পন্ন করার কথা।
এছাড়া একই বিধির ৩৭ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা আছে—কোনো প্রকৌশলী নিজ উদ্যোগে শ্রমিক এনে সরকারি নির্মাণকাজ করাতে পারবেন না। এ ধরনের ব্যয়কে “অবৈধ ব্যয়” হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি অডিট আপত্তির আওতায় পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তারা অনিয়মের তদন্ত, সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি এবং নির্মাণকাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন।