শীতের মৌসুমের শুরুতেই সুনামগঞ্জে বাড়ছে শিশুদের নানা রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিশু রোগী সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা এখন দ্বিগুণ হওয়ায় চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের ওপর চাপ বেড়েছে। বাড়তি রোগীর ভিড়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডা-সর্দি-জ্বরের পাশাপাশি নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। শিশু ওয়ার্ডে ৫৬টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিন ১০০ জনের উপরে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ৪ তারিখে ১০২ জন, ৫ তারিখে ৯৯ জন, ৬ তারিখে ১১৯ জন, ৭ তারিখে ১১৬ জন, ৮ তারিখে ১১৪ জন, ৯ তারিখে ১১৮ জন ও ১০ তারিখে ১২৪ জন শিশু রোগী ভর্তি ছিলো। শয্যার তুলনায় বেশি রোগী হওয়ায় অনেককেই মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
অভিভাবকদের অনেকেই জানান, শীতে হালকা কাশি বা সর্দি শুরু হলে তা দ্রুত বেড়ে যায়। চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে দেখা যায় জায়গা নেই, শয্যা খালি নেই। তারপরও শিশুর জন্য মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে রোগীসহ সবার ভোগান্তি বেড়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কামারটুক গ্রামের ময়মনা বিবি বলেন, নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কয়েকদিন ধরে জ্বর, সঙ্গে বমি হচ্ছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার বলেছে, রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। তিনি জানান, কোনো সিট খালি নেই। বেশি রোগী হওয়ায় ফ্লোরে জায়গা হয়েছে তাদের।
রঙ্গারচর ইউনিয়নে সফেরগাঁওয়ের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। বাচ্চার জ্বর, শর্দি, কফ হয়েছে। সিট খালি না থাকায় ফ্লোরে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি।
সুনামগঞ্জ সদর হাসাপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. মনির হোসেন বলেন, শীত শুরুর সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এই ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৫৬টি। বুধবার ১২৪ জন রোগী ভর্তি ছিলো। আমরা ফ্লোরে চাদর ও মেট্রেস দিয়ে থাকার জায়গা করেছি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর টিনের। এ কারণে রাতে বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগে। এজন্য ঘরের সিলিংয়ে শেড দিতে হবে। যাতে ঠান্ডা সরাসরি বাচ্চার উপরে না লাগে। এছাড়াও রুম গরম রাখার ব্যবস্থার পাশাপাশি বাচ্চার মাথায় টুপি পড়িয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। তার মতে, অভিভাবকদের সামান্য সতর্কতাই শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।