প্রকাশিত :
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২১:৩৬
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে একটি পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি)। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই টার্মিনালে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের আধুনিক ইক্যুইপমেন্ট যুক্ত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে টার্মিনাল এলাকায় ১৪টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
একই সঙ্গে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল লিমিটেড নতুন করে আরও চারটি ‘কী গ্যান্ট্রি ক্রেন’ সংযোজন করতে যাচ্ছে। এসব ইক্যুইপমেন্ট স্থাপনের পর টার্মিনালটি পূর্ণ সক্ষমতায় কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেডের পাশ থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত পুরোনো বিমানবন্দর সড়কের বাঁকগুলো সোজা করে উদ্ধার করা নদীর পাড়ের প্রায় ৩২ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। টার্মিনালে তিনটি জেটি রয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ অনায়াসে বার্থিং নেওয়ার সক্ষমতা রাখে। অতিরিক্ত গভীরতা এবং চ্যানেলে কোনো বাঁক না থাকায় বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানো পিসিটির জন্য সহজ হয়েছে। এখানে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় সৌদি আরবের রেড সী গেটওয়ে লিমিটেডের সঙ্গে টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪ সালের ৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে জাহাজ বার্থিং ও কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের অনুমোদন দেয়। তবে সরকারি অনুমোদন পাওয়া সত্ত্বেও ইক্যুইপমেন্ট সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে টার্মিনালটি এখনো পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি, ফলে বর্তমানে জাহাজের নিজস্ব ক্রেন ব্যবহার করেই রপ্তানি পণ্যের কন্টেনার জাহাজীকরণ করা হয়।
গত ১৪ মাস আগে পিসিটির জন্য ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের অর্ডার দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইক্যুইপমেন্ট ইতোমধ্যে সংযোজিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর সংযোজিত হয়েছে ১৪টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন। ২৫ মিলিয়ন ডলার বা দেশিয় ৩১২ কোটি টাকায় ওই চৌদ্দটি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন কিনেছে বিদেশি অপারেটর। আগামী এপ্রিলের মধ্যে চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজিত হলে এই টার্মিনালের ইক্যুইপমেন্ট বহর পুরোপুরি সমৃদ্ধ হবে এবং টার্মিনালটি পূর্ণ সক্ষমতায় কার্যক্রম চালাতে পারবে জানা গেছে।
পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালটি বছরে অন্তত ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষম। ৩২ একর জায়গার উপর নির্মিত এই টার্মিনালে ১৬ একর ইয়ার্ড সহ বিভিন্ন পশ্চাদসুবিধা রয়েছে। জেটি এলাকায় পানির গভীরতা সাড়ে ১১ মিটার হলেও ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি ১৯০ মিটার লম্বা এবং ১০–১০.৫ মিটার ড্রাফটের কন্টেনার জাহাজ থাকতে পারবে, আর ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে একটি ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব। তবে ২১০ মিটার বা তার বেশি লম্বা জাহাজ একসঙ্গে দুইটির বেশি ভিড়ানো যাবে না।
বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পিসিটি পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও আরএসজিটিআই চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাশুল পরিশোধ করছে। তারা মাসে কমপক্ষে আড়াই লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার ট্যারিফ প্রদান করার কথা ছিলো। বর্তমানে প্রতিমাসে চটগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক লাখ ডলারের মতো ট্যারিফ পাচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়।
বন্দর সুত্রে জানা গেছে, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২২ বছর সময়কাল টার্মিনাল পরিচালনা করবে আরএসজিটিআই। এই সময়ের পরে ইক্যুইপমেন্টসহ সম্পূর্ণ টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
রেড-সী গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) এর বাণিজ্যিক ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ আরেফ সারওয়ার জানান, আমাদের নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাকভাবে এগোচ্ছে। পুরোপুরি প্রস্তুত হতে দুই বছরের সময় দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে আগামী জুন পর্যন্ত সেই সময় রয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনালটি পুরোদমে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই শতাধিক প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে আরও চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মাধ্যমে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে পুরো গতি আসবে।
তিনি বলেন, টার্মিনালে আমাদের মোট ১৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়সহ আনুষাঙ্গিক খাতে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।