প্রকাশিত :
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৭:২১
চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান শিরা। দেশের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবাহিত হয় এই সড়ক দিয়ে। তবে মাত্র ৯ বছর আগে চার লেনে উন্নীত করা হলেও এখন অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি। শুধু যানজটের কারণেই প্রতিদিন এই সড়কে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার শ্রমঘণ্টা ও জ্বালানি অপচয় হচ্ছে।
২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৬ হাজারে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ককে নতুন করে ১০ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছয় লেনের টোলভিত্তিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ের পাশাপাশি দুই পাশে চার লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে অন্তত ৬২ হাজার কোটি টাকা। তবে বিপুল পরিমাণ এই ব্যয় নিশ্চিত হয়নি।
সওজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির অর্থায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে এডিবির সহায়তায় ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন হয়েছে।
অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে নতুন করে মহাসড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রকল্পটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা এই ২৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের ডান দিকে প্রায় ৯০ শতাংশ জমির মালিকানা সওজের। বাকি ১০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করার কারণেই প্রকল্প ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সওজের একটি সূত্র।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে ছয়টি মাল্টিলেভেল উড়াল ক্রসিং, ২০টির বেশি ফ্লাইওভার ইন্টারচেঞ্জ এবং আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা হবে। মূল হাইওয়েতে টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, মেঘনা ও ভৈরব সেতু এলাকায় যানজট কমাতে পৃথক দ্রুতগতির করিডর নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অর্থায়ন নিশ্চিত হলে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু একটি মহাসড়ক নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতি আনবে। এতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ থেকে ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২ জুলাই উদ্বোধন করা চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পে সেই ব্যয়ের তুলনায় প্রায় ১৬ গুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমি উন্নয়ন, মাল্টিলেভেল উড়াল ক্রসিং, ফ্লাইওভার ও ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ, ইলেকট্রনিক টোল ব্যবস্থা চালু, উন্নতমানের সিসিটিভি ও সড়ক নিরাপত্তা অবকাঠামো স্থাপনের কারণে প্রকল্প ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য বিশেষ স্টেশন এবং তিন মিটার প্রশস্ত জরুরি লেন নির্মাণও ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।