প্রকাশিত :
২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৯:২৭
সম্প্রতি রাজধানী ও রাজধানীর উপকণ্ঠ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকার গার্মেন্টসসহ আরও অনেক কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধ না হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
একাধিক সূত্র বলছে, চাঁদাবাজি দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রকাশ্যেই তা চলছে। ফুটপাতে, সড়কে, হাট-বাজারে চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। চাঁদাবাজরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
অপরাধপ্রবণতা নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ‘ক্রাইম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন রাজধানীতে বড় ধরনের ১২৮টি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির ঘটনা ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করতে চান না। বিশেষ করে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বাইরে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।
যেভাবে রাজধানী ও উপকণ্ঠে শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি চলছে
বৃহস্পতিবার মিরপুর এলাকার একাধিক পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা জানান, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ছোটবড় শতাধিক পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এসব কারখানা থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে। কারখানাভেদে প্রতি মাসে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।
পল্লবীর কালশী রোডের একটি গার্মেন্টসের মালিক গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে তাদের। সরকার পরিবর্তনের পর চাঁদাবাজ পরিবর্তন হলেও চাঁদার পরিমাণ কমেনি। প্রভাবশালী দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে তারা। বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনসহ তার সহযোগীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। প্রতি মাসে কারখানাপ্রতি তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় তাদের। টাকা না পেলে হত্যার হুমকি দেয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের জানিয়েও সুরাহা হয়নি।
মিরপুর ১২ নম্বরের একটি পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ‘আমাকে প্রতি মাসে চার লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। অনেক সময় কারখানায় পর্যাপ্ত কাজ থাকে না। কিন্তু তখনো চাঁদা দিতে হয়।’
পরিবহনেও চাঁদাবাজি : গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনেও চাঁদাবাজি চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে বিভিন্ন গার্মেন্টস পরিবহন কোম্পানি থেকেও লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্প-কারখানা, বাসাবাড়ি ও জমির মালিকরা চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অসহায়। সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, পাড়া-মহল্লা, ফুটপাত, মার্কেট, বাজার, ডিশ-ইন্টারনেট সংযোগসহ বাসাবাড়ির বর্জের জন্যও চাঁদা দিতে হয়। অনেক সময় মানুষের চলাচলের রাস্তা আটকেও চাঁদাবাজি চলছে। দাবি করা চাঁদা দিতে না পারলে চলে হামলা, মারধর ও মিথ্যা মামলা। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তাদের নামে মামলা নিচ্ছে না।
সাভার ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমির হোসেন জানান, গত ৫ জানুয়ারি সাভারের হেমায়েতপুরে চাঁদার দাবিতে রমজান আলী নামের একজন ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়।
একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে চাঁদা দাবি ও আদায় চলছে। প্রতিবাদ করলেই হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তাদের কথামতো চাঁদা না দিলে ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমা দিয়ে লাঞ্ছনাসহ মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়া হয়।
আরেকটি কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার কারখানার ঝুটও নিয়ন্ত্রণ করছে চাঁদাবাজরা। তাদের কথামতো বাজারদরের অর্ধেকে বিক্রি করতে হয় ঝুট। না দিতে চাইলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।’
আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা সব সময় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান পরিচালনা করছি। যৌথ বানিহীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করছেন। জনগণের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের অভিযান চলমান আছে।’