আপডেট :
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৫:১৫
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি হতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শীতের শুরু থেকেই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
শিশু ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন চিকিৎসা নিচ্ছে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় যার পরিমাণ অনেক বেশি। শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতেও চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে অনেককে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা শীতের প্রভাব বেশি অনুভব করে। এ ছাড়াও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে শীতের প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক শিশুর মা নুরনাহার বেগম জানান, ঠাণ্ডা বাড়ার পর থেকেই আমার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। গ্রাম থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তিন বছর বয়সের ছেলে নিশাত ইসলামকে তিনদিন ধরে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। এখন কিছুটা সুস্থ আছে।
শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা। শীতের কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর হরিণচওড়া চর এলাকার দিনমজুর মমিনুল ইসলাম জানান, চার বছরের শিশু সুমাইয়া আক্তার ঠাণ্ডাজনিত কারনে অসুস্থ হলে তাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চর থেকে হাসপাতালে আসা আমাদের জন্য কষ্টকর। তবুও সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও দীর্ঘ সময় কুয়াশা থাকার কারণে শ্বাসনালিতে সংক্রমণ বাড়ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে।
আদিতমারী উপজেলা হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হক জানান, শীতকালে শিশুদের গরম কাপড় পরানো, ঠাণ্ডা বাতাস এড়িয়ে চলা ও সর্দি-কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে আসা অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় ভুগছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে গ্যাস দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম জানান, শীতকাল এলেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শীতজনিত রোগ মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বৃদ্ধরা। শিশুদের কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গেল কয়েকদিন ধরে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। সকালের দিকে ঘন কুয়াশা থাকায় ঠাণ্ডা প্রকোপ বেশি অনুভূত হয়। রাতেও ঠান্ডার প্রকোপ বেশি থাকছে। ২৫ ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।